সোনা চোরাচালান একটি বহুল প্রচলিত অপরাধ, যা বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যমান। প্রতিদিনই বিভিন্ন বিমানবন্দর, যেমন ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর,সহ দেশের স্থল ও নৌ সীমান্ত দিয়ে বিপুল পরিমাণ সোনা পাচার হচ্ছে। কাস্টমস কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা জানান, ধরা পড়া সোনার পরিমাণের চেয়ে অনেক গুণ বেশি সোনা পাচার হয়ে যাচ্ছে।
তদন্তকারী সংস্থাগুলি ২৬টির বেশি সোনা চোরাচালান চক্র শনাক্ত করেছে। এই চক্রগুলিতে আওয়ামী লীগের নেতা, সাবেক সাংসদ, মানি এক্সচেঞ্জ ও হুন্ডি ব্যবসায়ীরা জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। তাদের সাথে দুবাই ও ভারতের স্বর্ণ ব্যবসায়ীরাও জড়িত। সোনার চালান প্রধানত দুবাই, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়া থেকে আসে। বাংলাদেশি চক্রের সদস্যরা চোরাই সোনা প্রাপকের হাতে পৌঁছে দেওয়ার ও বিনিয়োগ করার কাজ করে।
গোয়েন্দা সংস্থাগুলির তথ্য অনুযায়ী, ২০১২ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে দুই টন চোরাই সোনা জব্দ করা হয়েছে, যার বাজারমূল্য প্রায় ৮৫০ কোটি টাকা। এই সময়ে সোনা পাচারে জড়িত থাকার অভিযোগে ২০০ জনকে আটক করা হয়েছে, যাদের মধ্যে কিছু বিদেশিও রয়েছে। বিমানবন্দর ও সিভিল এভিয়েশনের কর্মকর্তাসহ ৩৫ জনকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে, অনেক আসামী জামিনে মুক্ত হয়ে আবারও সোনা চোরাচালানে যুক্ত হয়েছেন।
২০১৩ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে শুল্ক গোয়েন্দারা ২৩৪টি সোনা জব্দ মামলা দায়ের করেছেন, যেখানে ৩১৫ জনকে আসামী করা হয়। এই মামলাগুলির তদন্ত ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) কর্তৃক সম্পন্ন হয়েছে। সোনা চোরাচালানের প্রধান হোতাদের অধিকাংশকে গ্রেপ্তার করা হলেও, তারা জামিনে মুক্ত হওয়ার পর আবারও চোরাচালানে জড়িত হচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
সোনা চোরাচালানের কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো : ২১ নভেম্বর ২৩২ গ্রাম সোনা বারসহ একজন যাত্রীকে আটক করা, ১৮ নভেম্বর ৫০০ গ্রাম সোনা বার উদ্ধার, ২ ফেব্রুয়ারী সাড়ে ৩ কেজি সোনাসহ একজন যাত্রীকে আটক করা এবং ২০ ডিসেম্বর ৬ কোটি টাকার মূল্যের সোনা জব্দ করা।
সোনার চোরাচালান ধরা পড়ার প্রধান কারণ হলো বাংলাদেশে সোনার বাজারের তুলনায় ভারতের সোনার বাজার অনেক বড়। ভারতের উচ্চ আমদানি শুল্কের কারণে বাংলাদেশে চোরাচালানের পথ ব্যবহার করা হয়।
সোনা আসার পথ:
বিভিন্ন বিমানবন্দরে কর্মরত কর্মকর্তাদের সহায়তায় বিপুল পরিমাণ সোনা নির্বিঘ্নে বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে যায়। শুল্ক, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও বিমানের কর্মকর্তারা এ কাজে সহায়তা করেন। সোনা বিমানের বিভিন্ন স্থানে লুকিয়ে রাখা হয় এবং বিমানবন্দরে কর্মরত লোকজন সেগুলো বের করে আনে। মানি এক্সচেঞ্জ মালিকরা মধ্যস্থতা করে কমিশন পায় এবং বিনিয়োগ করে।
জড়িত ব্যক্তিরা: আওয়ামী লীগের সাবেক সাংসদ কাজী সিরাজুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রিয়াজউদ্দিন, ঢাকা মানি এক্সচেঞ্জের মালিক নবী নেওয়াজ খান, ভাই ভাই মানি এক্সচেঞ্জের মিজানুর রহমান, প্যারামাউন্ট মানি এক্সচেঞ্জের মালিক জাহাঙ্গীর হোসেন, সোনা ব্যবসায়ী দেব কুমার দাস, এস কে মোহাম্মদ আলী, উত্তরার ফারহান মানি এক্সচেঞ্জের মালিক হারুন অর রশীদ এবং মাসুদ করিম। তবে, এই তথ্য সম্পূর্ণ নাও হতে পারে। আমরা আপনাকে আরও তথ্য দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করছি।