জাহাঙ্গীর হোসেন

বীর প্রতীক শহীদ জাহাঙ্গীর হোসেন: স্বাধীনতা যুদ্ধের এক অমর নায়ক

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে অসংখ্য বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রাণের বিনিময়ে অবদান রেখেছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন বীর প্রতীক শহীদ জাহাঙ্গীর হোসেন। তার জন্ম তারিখ যদিও অজানা, তবে ১৯৭১ সালে তিনি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করে শহীদ হন। বরিশাল জেলার সদর উপজেলার চর কাউয়া ইউনিয়নের দিনারের পোল এলাকায় জন্মগ্রহণকারী জাহাঙ্গীর হোসেন অবিবাহিত ছিলেন। তার পিতার নাম আবদুল মজিদ মোল্লা এবং মাতার নাম ফাতেমা বেগম।

জাহাঙ্গীর হোসেন ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস (ইপিআর)-এ কর্মরত ছিলেন। ১৯৬৯ সালে ইপিআরে যোগদানের পর ঢাকার পিলখানায় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন এবং ১৯৭০ সালের শেষভাগে চট্টগ্রাম ইপিআর সেক্টরের অধীন ১৪ উইংয়ে (বর্তমানে ব্যাটালিয়ন) যোগদান করেন। তিনি ১৯৭১ সালে রামগড়ে নবীন সৈনিক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধের সূচনায় ২৫ মার্চ মধ্যরাতে রামগড়ে অবস্থানরত বাঙালি ইপিআর সদস্যরা চট্টগ্রাম থেকে ওয়্যারলেস বার্তা পেয়ে বিদ্রোহ শুরু করেন। ২৬ মার্চ সকালে তারা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুন্ড ও ভাটিয়ারির মাঝামাঝি কুমিরায় অবস্থান নেন এবং সেখানে তিন দিনব্যাপী তীব্র যুদ্ধে লিপ্ত হন। এই যুদ্ধে জাহাঙ্গীর হোসেন অসাধারণ সাহসিকতা ও বীরত্ব প্রদর্শন করেন। রফিকুল ইসলাম (বীর উত্তম) এর নির্দেশে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করেছিলেন তারা। কুমিরা যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ত্রিমুখী আক্রমণের মুখে জাহাঙ্গীর হোসেনসহ ১৪ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং অনেকে আহত হন।

কুমিরায় তাঁর অসাধারণ বীরত্বের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে। শহীদ জাহাঙ্গীর হোসেনের বলিদান স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তাঁর মহান আত্মত্যাগের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি রইল।

মূল তথ্যাবলী:

  • বীর প্রতীক শহীদ জাহাঙ্গীর হোসেন ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হন।
  • তিনি বরিশালের চর কাউয়ার বাসিন্দা ছিলেন।
  • ইপিআর-এ কর্মরত অবস্থায় তিনি কুমিরার যুদ্ধে অসাধারণ বীরত্ব দেখিয়েছিলেন।
  • কুমিরা যুদ্ধে তিনি শহীদ হন।
  • বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে।