বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ: একটি সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ও বিশ্লেষণ
বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের অবদান অপরিসীম। ১৯৪৯ সালের ২৩শে জুন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ হিসেবে যাত্রা শুরু করে এই দল। মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং শামসুল হক সাধারণ সম্পাদক। ঢাকার টিকাটুলীর রোজ গার্ডেন প্যালেসে প্রতিষ্ঠার পর, ১৯৫৫ সালে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে এর নামকরণ করা হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’।
প্রারম্ভিক দিনগুলিতে রাষ্ট্রভাষা বাংলা, এক ব্যক্তি এক ভোট, গণতন্ত্র, আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন, এবং পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বৈষম্য দূরীকরণের দাবি নিয়ে আন্দোলন করে আওয়ামী লীগ। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট সরকার গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং ১৯৭০ সালের নির্বাচনে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করে ১৬৭টি আসন জয় করে। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকদের স্বৈরাচারী মনোভাবের কারণে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সূত্রপাত ঘটে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের পর, আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৯৯৬ সালে আবার ক্ষমতায় আসে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। ২০০৯, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনেও তারা বিজয়ী হয়।
আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক মতাদর্শ গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং জাতীয়তাবাদ। প্রাথমিক পর্যায়ে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির পক্ষে ছিল দলটি। কিন্তু পরবর্তীতে বাজার অর্থনীতি ও বিদেশী বিনিয়োগকে উৎসাহিত করতে শুরু করে। তাদের উন্নয়ন কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে 'রূপকল্প ২০২১' এবং 'স্মার্ট বাংলাদেশ'।
আওয়ামী লীগের পররাষ্ট্রনীতিতে ‘সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারও সাথে শত্রুতা নয়’ নীতি প্রয়োগ করা হয়। তবে, ভারতের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখার পাশাপাশি চীন এবং অন্যান্য দেশের সাথেও সম্পর্ক বজায় রেখেছে। রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক সমর্থন লাভ করে দলটি।
আওয়ামী লীগের সমালোচকরা দলটিকে কর্তৃত্ববাদী এবং গণতন্ত্রবিরোধী আখ্যায়িত করে। বাকস্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে। তবে আওয়ামী লীগ এই অভিযোগগুলো প্রত্যাখ্যান করে এবং নিজেদেরকে দেশের উন্নয়নে কাজ করে যাওয়া একটি দল হিসেবে উপস্থাপন করে।