মানব পাচার একটি জঘন্য অপরাধ, যা জোরপূর্বক শ্রম, যৌন দাসত্ব এবং অন্যান্য শোষণমূলক কাজের জন্য মানুষকে অবৈধভাবে কেনাবেচা করার মাধ্যমে সংঘটিত হয়। এটি একটি দেশের অভ্যন্তরে বা আন্তর্জাতিক সীমান্ত পার হয়ে ঘটতে পারে। মানব পাচারকারীরা প্রায়শই নারী ও শিশুদের টার্গেট করে থাকে, কিন্তু পুরুষদেরও শিকার হতে হয়।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)-র তথ্য অনুসারে, শুধুমাত্র বলপূর্বক শ্রম থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বছরে ১৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় হয়েছে। ২০১২ সালের অনুমান অনুসারে, বিশ্বে প্রায় ২ কোটি ১০ লক্ষ মানুষ দাসত্বের শিকার, যার ৬৮% শ্রম শোষণের এবং ২২% যৌন শোষণের শিকার।
মানব পাচারকারীরা তাদের শিকারদের নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করে, যেমন শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, ভয় দেখানো, ঋণের ফাঁদে ফেলা এবং প্রতারণা। তারা শিকারদের গৃহকর্ম, কৃষি, উৎপাদন ও নির্মাণ কাজে বাধ্য করে।
জাতিসংঘের পালেরমো পাচার প্রোটোকল মানব পাচারকে অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং এর প্রতিরোধ ও দমনে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছে। নভেম্বর ২০১৮ পর্যন্ত ১৭৩ টি দেশ এই প্রোটোকলে স্বাক্ষর করেছে।
বাংলাদেশেও মানব পাচার একটি বড় সমস্যা। সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন ও সরকারী তথ্য অনুসারে, প্রতি বছর বহু মানুষ অবৈধভাবে বিদেশে পাচার হয়। অনেককে মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশে পাচার করা হয়। দুর্ভাগ্যবশত, পাচারকারীদের ধরার এবং শাস্তি প্রদানের হার খুবই কম।
মানব পাচারের ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এই জঘন্যতম অপরাধটি কোনো একক ব্যক্তির পক্ষে করা সম্ভব নয়। এই অপরাধের পেছনে থাকে বিশাল এক চক্র। এই চক্রের মধ্যে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক দালালরা জড়িত। দলবদ্ধ পরিকল্পনার মাধ্যমে এই অপরাধটি সংঘটিত হয়।
২০১২ সালের মানব পাচার দমন ও প্রতিরোধ আইন এবং এর পরবর্তী প্রয়োগের মাধ্যমে এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, সরকারি ও বেসরকারি সংগঠনসমূহের যৌথ প্রচেষ্টার মাধ্যমে মানব পাচারের প্রকোপ কমানো সম্ভব। আমরা যদি বেকারত্ব, দারিদ্র্য এবং অসচেতনতা কমাতে পারি, তাহলে মানব পাচারের ঝুঁকিও অনেকটা কমে আসবে। সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার করা, পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা এই অপরাধ দমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
মানব পাচার রোধে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, সরকার এবং বেসরকারি সংগঠনসমূহের যৌথ প্রচেষ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।