নরসিংদী: ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও উন্নয়নের এক অপূর্ব সমন্বয়
বাংলাদেশের ঢাকা বিভাগের অন্তর্গত নরসিংদী, ঐতিহাসিক গুরুত্ব, সমৃদ্ধ সংস্কৃতি এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য পরিচিত একটি শহর। মেঘনা নদীর তীরে অবস্থিত এই শহরটি ঢাকা থেকে উত্তর-পূর্বে অবস্থিত। নরসিংদী জেলা ও সদর উপজেলার প্রশাসনিক সদর দপ্তর এই শহরেই অবস্থিত। ২০.৯৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই শহরে প্রায় ১৮৫,১২৮ জন বাস করে, যা একে বাংলাদেশের ২৪তম বৃহত্তম শহর করে তুলেছে। জাতীয় মহাসড়ক এন২ শহর দিয়ে অতিক্রম করেছে।
ঐতিহাসিক পটভূমি:
ধারণা করা হয়, পঞ্চদশ শতাব্দীর প্রথম দিকে রাজা নরসিংহ নরসিংহপুর নামে একটি ছোট নগর স্থাপন করেছিলেন, যা থেকে নরসিংদীর নামকরণের উৎপত্তি। এক সময় এটি মহেশ্বরদী পরগনার অন্তর্ভুক্ত ছিল, যার জমিদার ছিলেন দেওয়ান ঈশা খাঁ ও পরবর্তীতে হয়বতনগর দেওয়ান সাহেব বাড়ির জমিদারগণ। জমিদারী প্রথা বিলুপ্তির পর, নরসিংদী ঢাকা জেলার নারায়ণগঞ্জ মহকুমার একটি থানা হিসেবে পরিচালিত হত। ১৯৮৪ সালে এটি জেলায় রূপান্তরিত হয়।
ভৌগোলিক অবস্থান ও জনসংখ্যা:
নরসিংদী ২০º৯৫΄ উত্তর অক্ষাংশ থেকে ২৩º৫৮΄ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০º৩৬΄ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ থেকে ৯২º৫০΄ দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত। ২০০১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী, নরসিংদী শহরের জনসংখ্যা ছিল ৩২,৩৬১ এবং ২০১১ সালের আদমশুমারীতে ১৮৫,১২৮। জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৮৮৩৭ জন।
অর্থনীতি:
নরসিংদী বস্ত্র শিল্পের জন্য বিখ্যাত। বিশেষ করে তাঁতশিল্পের জন্য এর সুনাম রয়েছে। কৃষি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্প কারখানা এ অঞ্চলের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
শিক্ষা:
শহরে বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো নরসিংদী সরকারি কলেজ, নরসিংদী মহিলা কলেজ, এবং অন্যান্য স্কুল-কলেজ। আব্দুল কাদির মোল্লা ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ব্রিটিশ কাউন্সিল (ক্যামব্রিজ) এবং আইবি করিকুলামের জন্য বিখ্যাত।
ঐতিহাসিক ঘটনা:
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে নরসিংদী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ৫ এপ্রিল পাকবাহিনীর রকেট বোমার আঘাতে ৩ জন নিহত হয় এবং শতাধিক দোকান ধ্বংস হয়। মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন লড়াইয়ে এখানে অনেক মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়েছেন।
উপসংহার:
নরসিংদী ঐতিহাসিক গৌরব, সমৃদ্ধ সংস্কৃতি, এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের এক অপূর্ব সমন্বয়। এর ঐতিহ্য রক্ষা এবং উন্নয়ন অব্যাহত রাখার জন্য সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা অপরিহার্য।