সিরাজগঞ্জ

সিরাজগঞ্জ: যমুনার তীরে অবস্থিত ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মেলবন্ধন

বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের রাজশাহী বিভাগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শহর সিরাজগঞ্জ। যমুনা নদীর পশ্চিম তীরে অবস্থিত এই শহর ঢাকা থেকে প্রায় ১১০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত। সিরাজগঞ্জ শুধুমাত্র একটি শহর নয়, এটি একটি জেলা ও সদর উপজেলার প্রশাসনিক কেন্দ্রও বটে। প্রায় ৪,৫০,০০০ জনসংখ্যার এই শহরের আয়তন ৩১.২৭ বর্গকিলোমিটার। যমুনা সেতুর পশ্চিম প্রান্ত থেকে সিরাজগঞ্জ শহরের দূরত্ব মাত্র ৮ কিলোমিটার। উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার হিসেবে সিরাজগঞ্জের গুরুত্ব অপরিসীম।

ঐতিহাসিক পরিচয়:

সিরাজগঞ্জের নামকরণের পেছনে রয়েছে সিরাজউদ্দিন চৌধুরী নামক এক ভূস্বামীর নাম। তিনি তার মহালে একটি গঞ্জ স্থাপন করেন, যার নামানুসারেই এই স্থানের নামকরণ হয়। যমুনা নদীর ভাঙ্গনের ফলে প্রাথমিক সিরাজগঞ্জ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায় এবং বর্তমান অবস্থানে নতুন করে স্থাপিত হয়। ১৮০৯ সালের দিকে খয়রাতি মহলের জমিদারি সেরেস্তা থেকে জমি কিনে সিরাজউদ্দিন চৌধুরী এটিকে ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য উপযুক্ত মনে করেন এবং পুনর্নবীকরণ করেন।

ভৌগোলিক অবস্থান ও জনসংখ্যা:

সিরাজগঞ্জের ভৌগোলিক অবস্থান ২৪º২২΄ উত্তর অক্ষাংশ থেকে ২৪º৩৭΄ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯º৩৬΄ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ থেকে ৮৯º৪৭΄ দ্রাঘিমাংশের মধ্যে। ২০২২ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী, শহরের জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে প্রায় ১৪,০০০ জন। লিঙ্গ অনুপাত ১০০ঃ১০২ এবং শিক্ষার হার ৯৮.২% (৭ বছরের উপরে)।

শিক্ষা ও স্বাস্থ্য:

সিরাজগঞ্জে দুটি মেডিকেল কলেজ (পাবলিক ও বেসরকারি), আটটি কলেজ, এবং বেশ কয়েকটি উচ্চ বিদ্যালয় রয়েছে। সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজ, ইসলামিয়া সরকারি কলেজ, এবং সরকারি রশিদাজ্জোহা মহিলা কলেজ উল্লেখযোগ্য। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শহরের শিক্ষার মান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।

অর্থনীতি:

সিরাজগঞ্জের অর্থনীতি মূলত কৃষি, ব্যবসা, এবং পরিবহণের উপর নির্ভরশীল। যমুনা নদী ও বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এছাড়াও বিভিন্ন কুটির শিল্পের মাধ্যমে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চলে।

ঐতিহাসিক ঘটনাবলী:

সিরাজগঞ্জের ইতিহাসে রয়েছে অনেক ঐতিহাসিক ঘটনা। ১৯২৪ সালে সিরাজগঞ্জে অনুষ্ঠিত নিখিল ভারত কংগ্রেসের সম্মেলনে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস পরিচালিত স্বরাজ পার্টির হিন্দু-মুসলিম প্যাক্ট অনুমোদিত হয়। মহাত্মা গান্ধী ও সুভাষচন্দ্র বসুসহ অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তি সিরাজগঞ্জ ভ্রমণ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধে সিরাজগঞ্জ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।

সিরাজগঞ্জ বর্তমানে একটি উন্নয়নশীল শহর হিসেবে আধুনিকতার স্পর্শে আলোকিত। ঐতিহাসিক গুরুত্ব, ভৌগোলিক অবস্থান, এবং অর্থনৈতিক সম্ভাবনার কারণে সিরাজগঞ্জ বাংলাদেশের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে পরিচিত।

মূল তথ্যাবলী:

  • সিরাজগঞ্জ যমুনা নদীর তীরে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক শহর।
  • এটি রাজশাহী বিভাগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শহর।
  • সিরাজগঞ্জের জনসংখ্যা প্রায় ৪,৫০,০০০।
  • শহরে দুটি মেডিকেল কলেজ, আটটি কলেজ এবং বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে।
  • ১৯২৪ সালে সিরাজগঞ্জে হিন্দু-মুসলিম প্যাক্ট অনুমোদিত হয়।
  • মুক্তিযুদ্ধে সিরাজগঞ্জ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।