আন্তর্জাতিক অপরাধ

আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১:০৭ পিএম

আন্তর্জাতিক অপরাধ: একটি ব্যাপক বিশ্লেষণ

মানব ইতিহাস জুড়ে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ ঘটেছে, কিন্তু আন্তর্জাতিক অপরাধের গুরুত্ব ও প্রভাব অনন্য। এটি রাষ্ট্রের সীমানা অতিক্রম করে, মানবতার বিরুদ্ধে গভীরতম অপরাধের আকার ধারণ করে। ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠী, জাতিসত্তা, আঞ্চলিকতা, আধিপত্য, প্রশাসনিক দুর্বলতা প্রভৃতি কারণে বৃহত্তর সমাজে পারস্পরিক অসহিষ্ণুতা সৃষ্টি হতে পারে। এই অসহিষ্ণুতা রাষ্ট্রকেও প্রভাবিত করে, কোনো নরগোষ্ঠী, ধর্ম, জাতিসত্তার প্রতি অসহিষ্ণুতা সৃষ্টি করে। হিটলারের আমলে জার্মানিতে ইহুদি নিধন, ইরানে বাহাই সম্প্রদায়ের উপর নির্যাতন, ১৯৪০-এর দশকে বাংলায় হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা, দেশ বিভাগের পর পূর্ব বাংলায় বাঙালি-বিহারী দাঙ্গা, পশ্চিম পাকিস্তানে সুন্নি-আহমদিয়া দাঙ্গা – এসব ঘৃণাজাত অপরাধের প্রকট উদাহরণ।

অপরাধ তত্ত্ব অনুসারে রাষ্ট্রীয় অব্যবস্থা, সুবিচারের অভাব, অসহায় সমাজ – এসব অপরাধের কারণ। কিন্তু কিছু ব্যক্তির স্বভাবগত অপরাধ প্রবণতাও রয়েছে। আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি নতুন ধরণের অপরাধের সৃষ্টি করেছে, যেমন সাইবার অপরাধ। সমাজের পরিবর্তনের সাথে অপরাধের ধরন ও প্রবণতাও পরিবর্তিত হয়। সিঙ্গাপুরে চুইংগাম বিক্রি অপরাধ, কিন্তু আমেরিকায় নয় – এটি অপরাধের সামাজিক সংজ্ঞার ভিন্নতার প্রমাণ।

সমাজতাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে, সমাজের আদর্শ লঙ্ঘনকে অপরাধ বলা হয়। এমিল দুর্খেইম মনে করেন, অপরাধ সমাজ ব্যবস্থার ‘স্বাভাবিক’ অংশ। শিকাগো স্কুল মতবাদ বিভিন্ন দলের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা ও অসঙ্গতির সাথে অপরাধের সম্পর্ক দেখায়। রবার্ট মার্টন সংস্কৃতি ও সমাজ কাঠামোর বৈপরিত্যের কথা বলেন, যার ফলে অনেকে নিয়মের বাইরে যায়। টার্ডে ও সাদারল্যান্ড অপরাধকে শিক্ষণজাত বলে মনে করেন।

আইনগত দৃষ্টিকোণ থেকে, অপরাধ আইনের লঙ্ঘনকে অপরাধ বলা হয়। অপরাধের উপাদানসমূহ হলো ক্ষতি, আইনগত বৈধতা, অপরাধমূলক কার্যসম্পাদন, দোষী মন, কার্যকারণ সম্পর্ক, ঐক্যমত্য এবং শাস্তি। অপরাধকে সহিংস অপরাধ, সম্পত্তি বিষয়ক অপরাধ, জনশৃঙ্খলা বিষয়ক অপরাধ, ভদ্রবেশী অপরাধ, সংঘবদ্ধ অপরাধ ও আধুনিক প্রযুক্তিগত অপরাধে ভাগ করা যায়।

বাংলাদেশে অপরাধ প্রবণতা ১৯৪৭ থেকে পর্যালোচনা করলে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, সীমান্ত অপরাধ, রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক সংকট, প্রশাসনিক দুর্বলতা – এগুলো অপরাধের কারণ হিসেবে দেখা যায়। স্বাধীনতা পরবর্তীতে যুদ্ধবিধ্বস্ত অবস্থা, দুর্বল অর্থনীতি, রাজনৈতিক পরিবর্তন, চরমপন্থী দলের উত্থান অপরাধ বৃদ্ধির কারণ হয়েছে। ১৯৯০-এর দশক থেকে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে নতুন ধরণের অপরাধ বৃদ্ধি পেয়েছে। মাদক পাচার, মানি লন্ডারিং, চাঁদাবাজি, ভাড়াটে খুন, মানুষ পাচার, দুর্নীতি – এসব অপরাধ বর্তমানে প্রকট। সন্ত্রাসবাদ, নারী ও শিশু নির্যাতনও বৃদ্ধি পেয়েছে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন ১৯৭৩ যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য প্রণীত হয়েছিল। এই আইন গণহত্যা, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য আইনি কাঠামো তৈরি করে। তবে এই আইনের প্রয়োগে বিভিন্ন সময়ে বাধা এসেছে। ২০১০ সালে প্রথম ও ২০১২ সালে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়। এই ট্রাইব্যুনালগুলো অনেক যুদ্ধাপরাধীর বিচার করেছে। তবে, আইনের আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সাথে সামঞ্জস্যের বিষয়েও সমালোচনা রয়েছে।

মূল তথ্যাবলী:

  • আন্তর্জাতিক অপরাধ রাষ্ট্রের সীমানা অতিক্রম করে।
  • ধর্ম, জাতি, গোষ্ঠীর প্রতি অসহিষ্ণুতা আন্তর্জাতিক অপরাধের কারণ।
  • আধুনিক প্রযুক্তি নতুন ধরনের অপরাধের সৃষ্টি করেছে।
  • বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, সীমান্ত অপরাধ, সন্ত্রাসবাদ, মাদক পাচার প্রভৃতি প্রকট।
  • আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন ১৯৭৩ যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য।

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।