মসজিদ: ইসলামের প্রাণকেন্দ্র
মসজিদ (আরবি: المسجد; উচ্চরণ: mæsdʒɪd) মুসলিমদের একত্রে নামাজ আদায়ের জন্য নির্মিত একটি ধর্মীয় স্থাপনা। 'সুজুদ' (সিজদা করা) শব্দ থেকে এর উৎপত্তি। প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, জুমার নামাজ, কুরআন শিক্ষা, ইসলামী অন্যান্য কার্যাবলী সম্পাদিত হয় এখানে। বৃহৎ মসজিদগুলোকে 'জামে মসজিদ' বলা হয়। একজন ইমাম এখানে নেতৃত্ব দেন।
মসজিদ মুসলিমদের আধ্যাত্মিক ও সামাজিক জীবনের কেন্দ্রবিন্দু। এখানে প্রার্থনা ছাড়াও, শিক্ষা প্রদান, তথ্য বিতরণ, বিরোধ নিষ্পত্তি, ঈদের নামাজ, রমজানের ইফতার, তারাবিহ ও লাইলাতুল কদরের ইবাদত, ইতিকাফ সহ নানা ধর্মীয় আয়োজন করা হয়।
প্রাথমিক মসজিদগুলি আরব উপদ্বীপে সাদাসিধে খোলা প্রাঙ্গণ ছিল। কালের বিবর্তনে এর স্থাপত্যে বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি ও স্থাপত্যশৈলীর প্রভাব পড়েছে। ৭ম শতাব্দী থেকে এর উন্নয়ন ব্যাপকভাবে ঘটেছে। অনেক মসজিদে সুবিশাল গম্বুজ, উঁচু মিনার ও বৃহৎ প্রাঙ্গণ দেখা যায়। ইসলামের বিস্তারের সাথে সাথে মসজিদ বিশ্বের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে।
বিভিন্ন দেশে মসজিদের স্থাপত্যে বৈচিত্র্য লক্ষ্যণীয়। মিশরের হাজার মিনারের শহর কায়রো, স্পেন ও সিসিলির মোরদের ইসলামী স্থাপত্য, চীনের জি-আন মসজিদের চীনা স্থাপত্যের সংমিশ্রণ, ইন্দোনেশিয়ার কাঠের বহুতল ছাদবিশিষ্ট মসজিদ, ভারতের মুঘল স্থাপত্য, তুরস্কের অটোম্যান মসজিদ, ইউরোপ ও আমেরিকার আধুনিক মসজিদ সবই মসজিদের স্থাপত্যের বৈচিত্র্যের প্রমাণ।
মসজিদ শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠানের স্থান নয়, এটি মুসলিম সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বাবরি মসজিদ ধ্বংস, ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার পর মসজিদে হামলা, ৭ জুলাই ২০০৫-এর লন্ডন বোমা হামলার পর মসজিদে ক্ষতিসাধনের ঘটনা ইত্যাদি মসজিদ কেন্দ্রিক সামাজিক সংঘাতের উদাহরণ।
মসজিদ দুই প্রকার: পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জন্য 'পাঁজেগানা মসজিদ' এবং জুমার নামাজের জন্য 'জামে মসজিদ'। মসজিদের কাঠামোতে নামাজের জায়গা, মিহরাব, মিনার, আযান দেওয়ার জায়গা, বারান্দা, ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত।
বাংলাদেশে অসংখ্য ঐতিহাসিক ও স্থাপত্যগত দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ মসজিদ রয়েছে; যেমন, চুড়িহাট্টা মসজিদ, মোগরাপাড়া মসজিদ, রাজবিবি মসজিদ, মির্ধা মসজিদ, চুনাখোলা মসজিদ, কিষ্ণনগর মসজিদ, সুলতানপুর মসজিদ, জাহানিয়া মসজিদ, অষ্টগ্রাম মসজিদ, মাহীসন্তোষ মসজিদ, নবগ্রাম মসজিদ, গোপালগঞ্জ মসজিদ, বারিয়া মসজিদ, শৈলকূপা মসজিদ, খন্দকারতলা মসজিদ, ঝনঝনীয়া মসজিদ, শালবাড়ি মসজিদ, সুজাউদ্দীন মসজিদ, গরীবুল্লাহ মসজিদ, নয়গম্বুজ মসজিদ ইত্যাদি। এই মসজিদগুলির স্থাপত্য, নির্মাণকাল, ঐতিহাসিক গুরুত্ব, স্থাপত্যশৈলী, অলংকরণ ইত্যাদি বিভিন্ন দিক বিশ্লেষণ করে লেখা হয়েছে।