সিরিয়া: ঐতিহ্য, সংঘাত ও ভবিষ্যৎ
পশ্চিম এশিয়ার একটি প্রাচীন ও গুরুত্বপূর্ণ দেশ সিরিয়া। লেবানন, ভূমধ্যসাগর, তুরস্ক, ইরাক, জর্ডান এবং ইসরায়েলের সাথে এর সীমান্ত রয়েছে। উর্বর সমতল, উচ্চ পর্বতমালা এবং মরুভূমি সমৃদ্ধ এ দেশটিতে আরব, গ্রীক, আর্মেনীয়, অশূরীয়, কুর্দি, কার্কাসীয় এবং তুর্কিসহ বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী বাস করে। ধর্মীয়ভাবে সুন্নি, শিয়া, খ্রিস্টান, আলবীয়, দ্রুজ, ইসমাইলি, মেন্ডীয়বাদী, ইয়াজিদি এবং ইহুদি সম্প্রদায়ের অস্তিত্ব রয়েছে। রাজধানী ও বৃহত্তম শহর দামেস্ক।
প্রাচীন ইতিহাস:
খ্রিস্টপূর্ব ১০,০০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে সিরিয়া নবপ্রস্তরযুগীয় সংস্কৃতির কেন্দ্র ছিল। কৃষি ও গবাদিপশু পালনের সূচনা এখানেই হয়েছিল। দামেস্ক ও আলেপ্পো মহান সাংস্কৃতিক গুরুত্বের শহর; দামেস্ক উমাইয়া খিলাফতের আসন ছিল। উসমানীয় শাসনের পর ফরাসি ম্যান্ডেট হিসেবে সিরিয়া প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৯৪৫ সালে স্বাধীনতা লাভ করে।
সংঘাত ও রাজনীতি:
সিরিয়ার রাজনীতি একটি সংসদীয় প্রজাতন্ত্রের কাঠামোয় পরিচালিত হলেও, ১৯৬৩ সাল থেকে দেশটিতে জরুরি অবস্থা জারি রয়েছে। বাথ পার্টির দীর্ঘকালীন ক্ষমতার ফলে দেশটি কার্যত একনায়কতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। আসাদ পরিবারের দীর্ঘ শাসনামলে প্রয়াত হাফিয আল-আসাদ এবং তার ছেলে বাশার আল-আসাদ দেশটি শাসন করেছেন।
২০১১ সালে আরব বসন্তের প্রভাবে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। সরকার ও বিদ্রোহীদের মধ্যে এই সংঘাতে প্রায় ৫ লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে এবং লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। আইএস জঙ্গিদের তাণ্ডবও দেশটিকে আরও বিধ্বস্ত করেছে। সিরিয়ান সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চের প্রতিবেদন অনুযায়ী, যুদ্ধের কারণে দেশটির অর্থনীতির বিপুল ক্ষতি হয়েছে।
ভৌগোলিক অবস্থান ও অর্থনীতি:
সিরিয়ার ভৌগোলিক অবস্থান এর অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভূমধ্যসাগরের উপকূলীয় অঞ্চল, উর্বর সমতল এবং ফোরাত নদী কৃষিকাজের জন্য উপযোগী। তবে যুদ্ধের কারণে কৃষি ও অন্যান্য অর্থনৈতিক কার্যকলাপ গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
শিক্ষা ব্যবস্থা:
৬ থেকে ১২ বছর বয়স পর্যন্ত শিক্ষা বাধ্যতামূলক এবং निःशुल्क। দামেস্ক ও আলেপ্পো বিশ্ববিদ্যালয় সহ দেশটিতে বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে।
সিরিয়ার ভবিষ্যৎ:
সিরিয়ার ভবিষ্যৎ এখনও অনিশ্চিত। গৃহযুদ্ধের পরে দেশটির পুনর্গঠন ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার জন্য বিশাল প্রচেষ্টার প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তা ও সহযোগিতা এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।