শেরপুর

শেরপুর: ইতিহাস, সংস্কৃতি ও বর্তমান

বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত ময়মনসিংহ বিভাগের অন্তর্গত শেরপুর জেলা, ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সমৃদ্ধ একটি অঞ্চল। প্রশাসনিকভাবে শেরপুর শহরটি শেরপুর জেলার সদর দপ্তর। ২৩.৪ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই শহরে প্রায় ৯৭,৯৭৯ জন মানুষ বসবাস করে। শেরপুরের নামকরণের দুটি প্রধান মতবাদ রয়েছে। একটি মতে, দশকাহনিয়া নামে পরিচিত এ অঞ্চলটি পরবর্তীতে গাজী বংশের শেষ জমিদার শের আলী গাজীর নামানুসারে শেরপুর নামকরণ হয়। অন্য মতে, বাঘের আধিক্যের কারণে এলাকাটিকে শের (বাঘ) এবং পুর (স্থান) মিলিয়ে শেরপুর বলা হতো।

ঐতিহাসিকভাবে শেরপুর কামরূপ রাজ্যের অংশ ছিল। মুঘল আমলে এটি দশকাহনিয়া বাজু নামে পরিচিত ছিল। ব্রিটিশ আমলে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে ফকির-সন্ন্যাসী বিদ্রোহে টিপু শাহের নেতৃত্বে শেরপুরে সার্বভৌমত্ব ঘোষণা করা হয়। ১৯০৬, ১৯১৪ ও ১৯১৭ সালে খোশ মুহাম্মদ চৌধুরীর নেতৃত্বে কামারের চরে কৃষক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ১৮৩৮-৪৮ সালে নানকার, টঙ্ক, বাওয়ালী, মহাজনী, ইজারাদারি ব্যবস্থার বিরুদ্ধে কমিউনিস্টদের বিদ্রোহ শেরপুরকেও কেঁপে ওঠে। ১৮৯৭ সালের ভয়াবহ ভূমিকম্প ব্রহ্মপুত্রের গতিপথ পরিবর্তন করে এবং শেরপুরের প্রাচীন ভবনগুলিকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে।

মুক্তিযুদ্ধে শেরপুর জেলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নালিতাবাড়ী, সোহাগপুর, সূর্যদী, নারায়ণখোলা, গৌড়দ্বার, বড়ইতার ও চন্দ্রকোনায় পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের তীব্র সংগ্রাম হয়। এই যুদ্ধে অনেক মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং গণকবর, বধ্যভূমি এবং স্মৃতিস্তম্ভ রয়ে গেছে মুক্তিযুদ্ধের সাক্ষী হিসেবে।

শেরপুরের অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর। ধান, পাট, গম, ডাল, সরিষা প্রভৃতি ফসল উৎপাদন হয়। এছাড়াও মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি পালন অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শেরপুরে বিভিন্ন ধরনের কুটির শিল্প, যেমন- মৃৎশিল্প, বুনন শিল্প, দারুশিল্প প্রভৃতি কাজ করে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দিক থেকে শেরপুর অপেক্ষাকৃত উন্নত। শেরপুর সরকারি কলেজ, শ্রীবর্দী সরকারি কলেজ, ওমরপুর সরকারি মহিলা কলেজসহ অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখানে অবস্থিত। শেরপুরের ঐতিহ্যবাহী লোকসংস্কৃতি, বিভিন্ন লোকগীতি, ভাটিয়ালি, জারি, সারি, ভাওয়াইয়া গান ইত্যাদি এ অঞ্চলের সাংস্কৃতিক ঐশ্বর্যের ধারক।

শেরপুর জেলার বিভিন্ন স্থানে ঐতিহাসিক মসজিদ, মন্দির, প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ রয়েছে। মধুটিলার ইকোপার্ক, ভোগাই নদীর উপর রাবার ড্যাম, গজনী অবকাশ কেন্দ্র, মরিয়ম নগর মিশন ইত্যাদি দর্শনীয় স্থান।

মূল তথ্যাবলী:

  • শেরপুর ময়মনসিংহ বিভাগের একটি ঐতিহাসিক শহর
  • গাজী বংশের জমিদার শের আলী গাজীর নামানুসারে শেরপুরের নামকরণ
  • কৃষি ও কুটিরশিল্পভিত্তিক অর্থনীতি
  • মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
  • প্রাচীন নিদর্শনাদি ও দর্শনীয় স্থান সমৃদ্ধ