দিনাজপুর

দিনাজপুর: উত্তরাঞ্চলের একটি ঐতিহাসিক শহর

বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত দিনাজপুর শুধুমাত্র একটি শহর নয়, বরং ইতিহাস, সংস্কৃতি ও প্রকৃতির এক অপূর্ব সমন্বয়। রংপুর বিভাগের অন্তর্গত দিনাজপুর জেলার প্রশাসনিক সদর এই শহর। রংপুর থেকে ৭৪.২ কিমি দূরে অবস্থিত এই শহরটি জনসংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশের ২৫তম বৃহত্তম শহর। ২০০১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী দিনাজপুর শহরের জনসংখ্যা ছিল ১,৬১,৪৩৫ জন, যা ২০১১ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯১,৩২৯ জনে।

ঐতিহাসিক গুরুত্ব:

দিনাজপুরের ইতিহাস বহু শতাব্দী প্রাচীন। লোককথামতে, দিনাজ নামক এক ব্যক্তির নামানুসারে শহরটির নামকরণ করা হয়েছে। মুগল আমলে কাশী ঠাকুর নামে একজন সন্ন্যাসী দিনাজপুর ও মালদা জেলা জুড়ে বিশাল অঞ্চলের অধিকারী ছিলেন। পরবর্তীতে, সুখদেব রায় রংপুর, বগুড়া, মালদা, দিনাজপুর ও বগুড়ার বিশাল জমিদারির উত্তরাধিকারী হন এবং সম্রাট আওরঙ্গজেব ১৬৭৭ সালে তাকে 'রাজা' উপাধিতে ভূষিত করেন। দিনাজপুর রাজবাড়ি, কান্তনগর মন্দির (নব-রত্ন মন্দির) এই শহরের গৌরবময় ঐতিহাসিক স্থাপত্যের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ১৮৯৭ সালের ভয়াবহ ভূমিকম্পে কান্তজী মন্দির ও জমিদারবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

ভৌগোলিক অবস্থান ও জনসংখ্যাগত তথ্য:

দিনাজপুরের অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশ ২৫°৩৭′১৮″ উত্তর ৮৮°৩৮′০৮″ পূর্ব। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর গড় উচ্চতা ৪২ মিটার। জেলাটির আয়তন ৩৪৪৪.৩০ বর্গ কিমি। জনসংখ্যা প্রায় ৩০ লক্ষ। এখানে মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, সাঁওতাল, ওরাওঁ, মাহলী, মালপাহাড়ী, কোল প্রভৃতি জনগোষ্ঠী বসবাস করে।

অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড:

দিনাজপুরের অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর। ধান, গম, পাট, আলু, শাকসবজি, আম, লিচু এখানকার প্রধান কৃষি ফসল। এছাড়াও রাইস মিল, অটো রাইস মিল, স'মিল, লেদ মেশিন, বিস্কুট ফ্যাক্টরি সহ বিভিন্ন শিল্প কারখানা রয়েছে।

দর্শনীয় স্থান:

দিনাজপুরে দেখার মতো অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে। দিনাজপুর রাজবাড়ি, কান্তনগর মন্দির, চেহেলগাজী মাযার, রামসাগর দীঘি, শুক সাগর, মাতা সাগর, সীতাকোট বিহার উল্লেখযোগ্য।

মুক্তিযুদ্ধে দিনাজপুরের অবদান:

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে দিনাজপুর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জেলার বিভিন্ন স্থানে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াই এবং পাকিস্তানী বাহিনীর নৃশংসতায় গণকবরের সৃষ্টি হয়েছে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান:

দিনাজপুরে দিনাজপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সহ অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। দিনাজপুর জিলা স্কুল (১৮৫৪), উইলিয়াম কেরী নিম্ন মাধ্যমিক স্কুল (১৭৯৯) ঐতিহাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উদাহরণ।

উপসংহার:

দিনাজপুর ইতিহাস, সংস্কৃতি, প্রকৃতি ও অর্থনীতির এক অনন্য সমন্বয়। এই শহরটি ভবিষ্যতে আরও উন্নত হবে বলে আশা করা যায়।

মূল তথ্যাবলী:

  • দিনাজপুর রংপুর বিভাগের একটি ঐতিহাসিক শহর
  • কাশী ঠাকুর ও সুখদেব রায় দিনাজপুরের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব
  • দিনাজপুর রাজবাড়ি ও কান্তনগর মন্দির দিনাজপুরের ঐতিহাসিক স্থাপত্য
  • কৃষি দিনাজপুরের অর্থনীতির মূল ভিত্তি
  • দিনাজপুর মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে
  • দিনাজপুরে অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে

গণমাধ্যমে - দিনাজপুর

২০ ডিসেম্বর ২০২৪, ৬:০০ এএম

এই জেলায় শীতের তীব্রতা বেশি বিরাজ করছে।