কালাইয়া বন্দর: পটুয়াখালীর ঐতিহ্যবাহী বাণিজ্যিক কেন্দ্র
পটুয়াখালী জেলার বাউফল উপজেলায় অবস্থিত কালাইয়া বন্দর বাংলার দক্ষিণাঞ্চলের একটি ঐতিহ্যবাহী ও গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক কেন্দ্র। প্রায় ৪০০ বছরের পুরোনো এই বন্দরের ইতিহাস চন্দ্রদ্বীপ রাজ্যের সঙ্গে জড়িত। কিংবদন্তী অনুযায়ী, চন্দ্রদ্বীপের রাজা ‘কালাই’ রাজ্যের দক্ষিণে প্রবাহিত খালের তীরে এই ঘাট স্থাপন করেন, যা পরবর্তীতে বাজার ও বন্দরে পরিণত হয়।
বর্তমানে কালাইয়া বন্দর দক্ষিণাঞ্চলের বৃহত্তম ও ঐতিহ্যবাহী হাট হিসেবে পরিচিত। সপ্তাহে প্রতি সোমবার বসে এই জমজমাট হাট। গরু-মহিষের বৃহৎ হাটের জন্য এটি বিশেষভাবে পরিচিত। পটুয়াখালীর দশমিনা, গলাচিপা, রাঙ্গাবালী, চরকাজল, ভোলা জেলার লালমোহন, নাজিরপুর, চরফ্যাশন, চরকলমি, কুকরি মুকরিসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ব্যবসায়ীরা এখানে গরু-মহিষ বিক্রি করতে আসেন। চট্টগ্রাম, লক্ষীপুর, চাঁদপুর, ঢাকাসহ অন্যান্য অঞ্চল থেকেও ব্যবসায়ীরা গরু কিনতে আসেন।
ধানের ব্যবসা কালাইয়া বন্দরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা থেকে নৌপথে হাজার হাজার মণ ধান এখানে আসে এবং নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা এটি কিনে নিয়ে যান। এছাড়াও বাঁশের তৈরি কুলা, ডালা, মোড়া, খাঁচা, হোগলা পাতার তৈরি পাটি, ছিকা, শামুকের খোলসের চুন, গাছের চারা ইত্যাদি নানামুখি ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য কালাইয়া বন্দর একটি জমজমাট ব্যবসাকেন্দ্র।
আলোকী নদীর তীরে অবস্থিত এই বন্দরের নদীটি দখল ও দূষণের শিকার হচ্ছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। ফলে একসময়ের উত্তাল আলোকী নদী এখন খালে পরিণত হয়েছে, যা বন্দরের বাণিজ্যিক কার্যকলাপকে প্রভাবিত করছে। বন্দরের উন্নয়ন ও আলোকী নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনার জন্য স্থানীয়দের দাবি রয়েছে।