ঐতিহ্য: বাংলাদেশের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য
বাংলাদেশের ঐতিহ্য বহুবিধ ও আকর্ষণীয়। প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত বিভিন্ন জাতি, গোষ্ঠী ও সংস্কৃতির সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে আমাদের এই ঐতিহ্য। নদী-নদী, খাল-বিল, উর্বর ভূমি এবং অনুকূল আবহাওয়ার কারণে কৃষি ও মৎস্য আহরণ ছিল প্রাচীনকাল থেকেই জীবিকার প্রধান উৎস। এই প্রাকৃতিক সম্পদের প্রভাবেই গড়ে উঠেছে আমাদের অনেক প্রথা ও উৎসব।
কৃষিভিত্তিক প্রথা:
নবান্ন উৎসব: অগ্রহায়ণ মাসে ধান কাটার পর নতুন ধানের চাল দিয়ে পিঠা, খিচুড়ি, পান্তাভাত প্রস্তুত করে খাওয়া হয়। গান, নাচ, হাডুডু খেলা, ষাঁড়ের লড়াই ইত্যাদিও অনুষ্ঠিত হয়।
ঐতিহ্যবাহী উৎসব:
পয়লা বৈশাখ: বাংলা নববর্ষের এই দিনটিতে নতুন কাপড় পরে, পান্তাভাত, চিড়া-গুড় খেয়ে মেলায় যাওয়া, ঘোড়ায় চড়া, নাগরদোলা, যাত্রা-পুতুলনাচ উপভোগ করা হয়।
ধর্মীয় উৎসব:
ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা: মুসলমানদের দুটি প্রধান ধর্মীয় উৎসব। ঈদের নামাজ, কুরবানি, মিষ্টিমুখ, আত্মীয়স্বজনের সাথে মিলনমেলার মাধ্যমে উদযাপন করা হয়।
দুর্গাপূজা: হিন্দুদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। দশ দিন ধরে দেবী দুর্গার পূজা, আরতি, নাচ-গান, মূর্তি বিসর্জন ইত্যাদি অনুষ্ঠানাদি।
ক্রিসমাস: খ্রিস্টানদের জন্মদিন উৎসব, ক্রিসমাস ট্রি সজ্জা, ক্রিসমাস ডিনার, উপহার বিনিময় ইত্যাদি।
বৌদ্ধ পূর্ণিমা: বৌদ্ধদের প্রধান উৎসব, বুদ্ধের জন্ম, বোধি, মহাপরিনির্বাণের স্মৃতিচারণ।
সামাজিক প্রথা:
যৌথ পরিবার: বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজে যৌথ পরিবার ব্যবস্থা বর্তমান। বয়স্কদের প্রতি শ্রদ্ধা, ছোটদের প্রতি ভালোবাসা, আত্মীয়তার বন্ধন।
বিয়ে: ঘটকের মাধ্যমে বিয়ের ব্যবস্থা, প্রথাগত আচার-অনুষ্ঠান, যৌতুক, ভোজভাত।
কুসংস্কার ও লোকবিশ্বাস: গ্রামীণ এলাকায় কিছু কুসংস্কার ও লোকবিশ্বাস এখনও প্রচলিত আছে, যেমন জ্বিন-ভূত, ওঝা, বেদেনী ইত্যাদি।
ঐতিহ্যের ধারক:
আমাদের ঐতিহ্য আমাদের পরিচয়। আধুনিকতার ধাবমান জগতেও আমাদের ঐতিহ্যকে ধরে রাখা প্রয়োজন, তবে অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কার থেকে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।