বাণিজ্য: বাংলার অর্থনৈতিক ইতিহাসের মূল চালিকাশক্তি
বাংলার অর্থনীতির ইতিহাসে বাণিজ্য সর্বদাই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। প্রাচীনকাল থেকেই নদী-নালা ও বঙ্গোপসাগরের সান্নিধ্যে বাংলা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছিল। খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় সহস্রাব্দ থেকেই বাংলায় ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রমাণ পাওয়া যায়। পুন্ড্রবর্ধন, রাঢ়, বঙ্গ ও সমতট - এই চারটি প্রধান ভৌগোলিক অঞ্চল নিয়ে গঠিত ছিল প্রাচীন বাংলা। প্রাচীনকালে কৃষি ছিল অর্থনীতির মূল ভিত্তি, তবে বাণিজ্যের মাধ্যমেও অর্থ উপার্জন করা হতো। ধান, তিল, আখ, তেজপাতা, সুগন্ধি তেল, মসলিন, কামারুনী অগুরু কাঠ, গন্ডারের খড়গ, অশ্ব - এসবই ছিল বাংলার গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানিযোগ্য পণ্য।
প্রাচীন বাংলার গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্রগুলির মধ্যে ছিল পুন্ড্রনগর (মহাস্থানগড়, বাংলাদেশ), তাম্রলিপ্তি (তমলুক, পশ্চিমবঙ্গ), চন্দ্রকেতুগড় (উত্তর চব্বিশ পরগনা, পশ্চিমবঙ্গ), সমন্দর (চট্টগ্রামের কাছে)। বণিকদের মধ্যে সাধারণ বণিক, সার্থবাহ ও শ্রেষ্ঠীদের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল। যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত হতো নদীপথ, স্থলপথ ও সমুদ্রপথ। পেরিপ্লাস অব দ্য ইরিথ্রিয়ান সী, কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র, ইবন বতুতা, মা-হুয়ান, মার্কোপোলো, চীনা বিভিন্ন বিবরণ - এসব তথ্যসূত্র থেকে প্রাচীন বাংলার বাণিজ্যের বিস্তারিত ধারণা পাওয়া যায়।
মধ্যযুগেও বাংলার বাণিজ্যের ধারা অব্যাহত ছিল। বস্ত্র ও চাল ছিল প্রধান রপ্তানি পণ্য। চট্টগ্রাম ও সাতগাঁও ছিল প্রধান বন্দর। ষোল শতকে পর্তুগিজ, ইংরেজ, ওলন্দাজ, ফরাসি ইত্যাদি ইউরোপীয় কোম্পানি বাংলায় বাণিজ্য শুরু করে। হুগলি পরে প্রধান বন্দর হয়ে ওঠে। ইউরোপীয়রা মূলত সোনা-রূপার বিনিময়ে বাংলার পণ্য কিনত। এশীয় বণিকদেরও বাংলার বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। পলাশীর যুদ্ধের পর ইংরেজ কোম্পানি বাংলার বাণিজ্যে একচেটিয়া অধিকার প্রতিষ্ঠা করে।
স্বাধীন বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের ইতিহাসে আমদানির চেয়ে রপ্তানির পরিমাণ সর্বদা কম ছিল। গার্মেন্টস, চিংড়ি, চামড়া প্রভৃতি প্রধান রপ্তানি পণ্য। আমদানির পণ্যের মধ্যে রয়েছে খাদ্যশস্য, পেট্রোলিয়াম, যন্ত্রপাতি প্রভৃতি। বাংলাদেশ সরকার বৈদেশিক বাণিজ্যের উন্নয়নের জন্য নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।