গলাচিপা: পটুয়াখালীর একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা
বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত পটুয়াখালী জেলার একটি উল্লেখযোগ্য উপজেলা হল গলাচিপা। বরিশাল বিভাগের অন্তর্গত এই উপজেলাটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঐতিহাসিক গুরুত্ব এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য পরিচিত। গলাচিপা শহরটি উপজেলার প্রশাসনিক কেন্দ্রবিন্দু।
ভৌগোলিক অবস্থান ও জনসংখ্যা:
গলাচিপা উপজেলার আয়তন ৯২৪.৬৮ বর্গ কিলোমিটার। এর অবস্থান ২১°৪৮´ থেকে ২২°২১´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°১৫´ থেকে ৯০°৩৭´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, উপজেলার জনসংখ্যা ছিল ২৫৮৫১৫ জন, যার মধ্যে পুরুষ ১২৭২৪৯ এবং মহিলা ১৩১২৬৬ জন। এখানে মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী মানুষের বসবাস রয়েছে। রাখাইন জনগোষ্ঠীর একটি উল্লেখযোগ্য অংশ এখানে বাস করে।
অর্থনীতি:
গলাচিপার অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর। ধান, ডাল, বাদাম, পান, মরিচ, শাকসবজি ইত্যাদি প্রধান কৃষি ফসল। মাছ, চিংড়ি, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামারও এখানে উল্লেখযোগ্য। কুটির শিল্প, যেমন তাঁতশিল্প, ওয়েল্ডিং কারখানা, স্বর্ণশিল্প ইত্যাদিও অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব:
গলাচিপার ঐতিহাসিক গুরুত্ব অসীম। ১৭৮৪ সালে বার্মা রাজা কর্তৃক বিতাড়িত রাখাইনরা এখানে আশ্রয় নিয়ে বসতি স্থাপন করেছিল। উপজেলায় বেশ কিছু প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ রয়েছে, যেমন সূতাবাড়িয়া দয়াময়ী মন্দির (১২০৮ সাল), রতনদীর এক গম্বুজবিশিষ্ট গুরিন্দা মসজিদ (অষ্টাদশ শতক) ইত্যাদি। মুক্তিযুদ্ধের সময় গলাচিপা বিভিন্ন যুদ্ধের সাক্ষী ছিল।
প্রশাসন ও অবকাঠামো:
গলাচিপা থানা ১৮৭৩ সালে এবং উপজেলা ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। গলাচিপা পৌরসভা ১৯৯৮ সালে গঠিত হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, যোগাযোগ ব্যবস্থা, বাজার ইত্যাদি অবকাঠামোগত উন্নয়ন ধীরে ধীরে হচ্ছে।
উপসংহার:
গলাচিপা পটুয়াখালীর একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা যা তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঐতিহাসিক গুরুত্ব এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য পরিচিত। এই উপজেলার উন্নয়নে আরও ব্যাপক উদ্যোগের প্রয়োজন রয়েছে।