উন্নয়ন

উন্নয়ন: এক বহুমুখী ধারণা

উন্নয়ন শব্দটির অর্থ কেবলমাত্র আর্থিক উন্নতি নয়; বরং এটি এক ব্যাপক ধারণা যা জড়িত সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং পরিবেশগত বিভিন্ন দিক। এই নিবন্ধে আমরা বাংলাদেশের উন্নয়নের বিভিন্ন দিক, তার অর্থসংস্থান, প্রশাসন, পরিকল্পনা, এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করবো।

  • *উন্নয়ন অর্থসংস্থান:** বাংলাদেশের উন্নয়ন অর্থসংস্থানের প্রধান উৎস হলো বৈদেশিক সাহায্য এবং অভ্যন্তরীণ রাজস্ব। ১৯৯০-এর পূর্বে উন্নয়ন বাজেট প্রধানত বৈদেশিক সাহায্যের উপর নির্ভরশীল ছিল। তবে সম্প্রতি অভ্যন্তরীণ রাজস্বের অবদান বৃদ্ধি পাচ্ছে। কর ব্যবস্থার দুর্বলতা, সীমিত করভিত্তি, এবং কর প্রশাসনের দুর্বলতা এখনও উন্নয়ন অর্থসংস্থানের একটি বড় চ্যালেঞ্জ। রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের শিল্প প্রতিষ্ঠানের লোকসানও উদ্বেগের বিষয়। ২০২০-২০২১ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) মোট বরাদ্দ ছিল ২০৫,১৪৫ কোটি টাকা, এবং ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ২৩৬,৭৯৩ কোটি টাকা।
  • *উন্নয়ন প্রশাসন ও পরিকল্পনা:** বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রশাসনে পরিকল্পনা কমিশন, অর্থ মন্ত্রণালয়, এবং বাংলাদেশ ব্যাংক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দেশের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি উন্নয়ন কার্যক্রমের নির্দেশিকা। প্রকল্প ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা উন্নয়নের প্রধান বাধা। বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
  • *বিভিন্ন খাতে উন্নয়ন:** কৃষি, পল্লী উন্নয়ন, শিল্প, যুব উন্নয়ন, এবং টেকসই উন্নয়ন বাংলাদেশের উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ দিক। পল্লী উন্নয়নে বার্ড, গ্রামীণ ব্যাংক, ব্র্যাক এর মতো প্রতিষ্ঠান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। যুব উন্নয়ন ক্ষেত্রে দক্ষতা বৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি গুরুত্বপূর্ণ। টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে জাতিসংঘের SDGs অনুসরণ করা হচ্ছে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে।
  • *বেসরকারি সংগঠন (এনজিও) এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠান:** এনজিওগুলি বাংলাদেশের উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। ক্ষুদ্রঋণ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবেশ সংরক্ষণ প্রভৃতি ক্ষেত্রে এদের অবদান উল্লেখযোগ্য। তুলা উন্নয়ন বোর্ড, উদ্যান উন্নয়ন বোর্ড, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট, এবং রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করছে। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে।
  • *চ্যালেঞ্জ:** দুর্নীতি, প্রশাসনিক দুর্বলতা, অনুন্নত অবকাঠামো, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, দারিদ্র্য, পরিবেশগত সমস্যা উন্নয়নের পথে বড় চ্যালেঞ্জ। এই সমস্যাগুলি মোকাবেলা করে টেকসই উন্নয়ন অর্জনে একযোগে কাজ করার প্রয়োজন।

মূল তথ্যাবলী:

  • ১৯৯০ এর পূর্বে উন্নয়ন বাজেট বৈদেশিক সাহায্যের উপর নির্ভরশীল ছিল।
  • সম্প্রতি অভ্যন্তরীণ রাজস্বের অবদান বৃদ্ধি পাচ্ছে।
  • প্রকল্প ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা উন্নয়নের প্রধান বাধা।
  • বার্ড, গ্রামীণ ব্যাংক, ব্র্যাক পল্লী উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
  • টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে জাতিসংঘের SDGs অনুসরণ করা হচ্ছে।
  • দুর্নীতি ও প্রশাসনিক দুর্বলতা উন্নয়নের প্রধান বাধা।

গণমাধ্যমে - উন্নয়ন