কালাইয়া বন্দর: ঐতিহ্য ও অর্থনীতির সম্মিলন
পটুয়াখালী জেলার বাউফল উপজেলায় অবস্থিত কালাইয়া বন্দর বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ নদীবন্দর। প্রায় ৪০০ বছরের পুরোনো এই বন্দরের ইতিহাস অতীতের চন্দ্রদ্বীপ রাজ্যের সাথে জড়িত। ব্রিটিশ, পর্তুগিজ, ডাচ ও ফরাসি নাবিকদের জাহাজ এখানে ভিড়তো ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য। চন্দ্রদ্বীপের রাজা ‘কালাই’ এর নামানুসারে এ বাজারের নামকরণ হয় ‘কালাইয়া’। কালক্রমে এটি বন্দর হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব:
কালাইয়া বন্দর দীর্ঘদিন ধরে দক্ষিণাঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্র। বিদেশী ব্যবসায়ীদের আগমনের সাথে সাথে এ বন্দরের বাণিজ্যিক গুরুত্ব আরও বৃদ্ধি পায়। ষোড়শ শতকে ফরাসি, ডাচ এবং ইংরেজ জাহাজ এখানে ভিড়তো কৃষিপণ্য ও মিঠা পানির জন্য।
বর্তমান অবস্থা:
বর্তমানে কালাইয়া বন্দর সপ্তাহে প্রতি সোমবার হাট বসে। এটি দক্ষিণাঞ্চলের বৃহত্তম ও ঐতিহ্যবাহী হাট হিসেবে পরিচিত। এখানে গরু-মহিষ, ধান, মাছ, কৃষিপণ্য ও নানান প্রকারের দ্রব্যের প্রচুর লেনদেন হয়। পটুয়াখালী, ভোলা, লালমোহন, বরিশালসহ বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা এখানে আসেন তাদের পণ্য বিক্রয় করতে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, চাঁদপুরসহ অন্যান্য জেলার ব্যবসায়ীরাও এখানে পণ্য ক্রয় করেন। বছরে তিন হাজার কোটি টাকারও বেশি আর্থিক লেনদেন এ বন্দরে হয় বলে ধারণা করা হয়।
সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ:
কালাইয়া বন্দরের অবস্থান বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে এবং পায়রা বন্দরের কাছাকাছি হওয়ায় এর অর্থনৈতিক গুরুত্ব অপরিসীম। তবে অবকাঠামোগত অভাব, যেমন- সড়কের অপ্রশস্ততা, নাব্যতা হ্রাস, হিমাগারের অভাব, বিশ্রামাগার ও পাবলিক টয়লেটের অভাব ইত্যাদি কারণে এর সম্পূর্ণ সামর্থ্য কাজে লাগানো সম্ভব হচ্ছে না। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় এই বন্দরকে আরও উন্নত করে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখা সম্ভব। প্রয়োজনীয় উন্নয়নমূলক কাজ করে কালাইয়া বন্দরকে আধুনিকীকরণ এবং আন্তর্জাতিক মানের বন্দরে রূপান্তর করা সম্ভব হলে এটি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখতে পারবে।
কোনো অতিরিক্ত তথ্য পাওয়া গেলে আমরা আপনাকে অবগত করব।