দেওয়ান হাট: চট্টগ্রামের একটি ঐতিহাসিক বাজারের কাহিনী
চট্টগ্রামের দেওয়ান হাট, শহরের ঐতিহ্যের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত একটি গুরুত্বপূর্ণ বাজার। এই লেখায় আমরা দেওয়ান হাটের ইতিহাস, গুরুত্ব এবং ঐতিহাসিক পটভূমি বিশ্লেষণ করবো।
প্রতিষ্ঠা ও প্রাথমিক ইতিহাস:
মহা সিং নামক একজন মোগল প্রশাসক দেওয়ান হাটের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ১৭৫৩ খ্রিস্টাব্দে নায়েব সুবাদার পদে অভিষিক্ত হন এবং ১৭৫৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত চট্টগ্রামে কর্মরত ছিলেন। পোস্তার পাড়ের সংলগ্ন পশ্চিমে এই হাট প্রতিষ্ঠিত হয়। পোস্তা মধ্যযুগের চট্টগ্রাম শহরে প্রবেশের গুরুত্বপূর্ণ সংযোগস্থল হিসাবে পরিচিত ছিল। মহা সিংয়ের কর্মকালেই পলাশীর যুদ্ধ সংঘটিত হয়। তিনি দোহাজারি, কাঞ্চননগর এবং সীতাকুন্ডেও কার্যালয় স্থাপন করেছিলেন। সীতাকুন্ডের কার্যালয় ‘সিংহের হাবেলি’ নামে পরিচিত ছিল। একই সময়ে হাটহাজারি কেন্দ্রে জনৈক বীর সিং একটি বাজার স্থাপন করেছিলেন।
পোস্তার পাড়ের গুরুত্ব:
পোস্তার পাড়ের নামকরণ ফারসি শব্দ ‘পুস্ত’ থেকে এসেছে, যার অর্থ ‘উল্টো দিক’ বা ‘পিছন দিক’। নদী তীরে অবস্থিত সুলকবহর বন্দরের প্রেক্ষিতে পোস্তার পাড়ের অবস্থান ছিল উল্টো দিকে বা পেছনের দিকে। কর্ণফুলী নদী থেকে খাল দিয়ে নৌকায় আসা যেত এখানে। ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে ক্যপ্টেন পগসন নদী তীরের মগ ঘাট থেকে নৌকায় এই খাল বেয়ে শহরে ক্যন্টনমেন্টে পৌঁছেছিলেন। খালটির অবশেষ এখনও আরাকান খাল নামে পরিচিত। এই এলাকায় সম্প্রতি সৌষ্ঠবপূর্ণ তুঘরা শৈলীতে খোদিত এবং কিছু ফারসি শব্দ মিশ্রিত একখানা আরবি শিলালিপি আবিষ্কৃত হয়েছে, যেখানে সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহ এর আমলে (১৪৯৩-১৫১৯ খ্রি.) জনৈক মজলিস খুরশিদ কর্তৃক নির্মিত একটি মসজিদের উল্লেখ রয়েছে।
দেওয়ান হাটের ভৌগোলিক অবস্থান ও গুরুত্ব:
চট্টগ্রামের প্রথম মুসলিম বিজেতা সোনারগাঁয়ের সুলতান ফখরুদ্দিন মোবারক শাহ নির্মিত রাস্তাটি পোস্তা পাড় (পার) হয়ে শহরে উপনত হতো। জলপথ ও স্থলপথের সংযোগস্থল হিসাবে এই স্থানের গুরুত্ব ছিল। মহা সিং এই গুরুত্বপূর্ণ স্থানটিকেই বেছে নেন দেওয়ান হাট স্থাপনের জন্য।
অতিরিক্ত তথ্য:
দেওয়ান হাট সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। আমরা নতুন তথ্য প্রাপ্তির সাথে সাথে এই লেখাটি আপডেট করবো।