বাউফল উপজেলা, পটুয়াখালী জেলার একটি প্রশাসনিক এলাকা, বাংলাদেশের বরিশাল বিভাগে অবস্থিত। ৪৮৭.১০ বর্গ কিমি আয়তনের এই উপজেলাটি ২২°১৯´ উত্তর অক্ষাংশ থেকে ২২°৩৬´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°২৫´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ থেকে ৯০°৪০´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত। এর উত্তরে বাকেরগঞ্জ ও ভোলা সদর উপজেলা, দক্ষিণে দশমিনা ও গলাচিপা উপজেলা, পূর্বে ভোলা সদর, বোরহানউদ্দিন ও লালমোহন উপজেলা এবং পশ্চিমে পটুয়াখালী সদর ও বাকেরগঞ্জ উপজেলা অবস্থিত। তেঁতুলিয়া ও লোহালিয়া এখানকার প্রধান নদী।
ঐতিহাসিকভাবে, ১৭৯০ খ্রিস্টাব্দে লর্ড কর্নওয়ালিশের ভারত শাসন সংস্কার আইনে বাকেরগঞ্জ জেলাকে ১০টি থানায় বিভক্ত করা হয়, যার মধ্যে বাউফল থানা অন্যতম ছিল। ১৮৬৭ সালের ২৭ মার্চ কোলকাতা গেজেটে পটুয়াখালী মহকুমা সৃষ্টির ঘোষণা প্রকাশিত হয়, যার অধীনে ৪টি থানার মধ্যে বাউফলও অন্তর্ভুক্ত ছিল। জনশ্রুতি অনুসারে, এ অঞ্চলে প্রচুর 'বাউ' গাছ থাকার কারণে এর নামকরণ 'বাউফল' হয়েছে। ১৮৭৪ সালের আগস্ট মাসে পুলিশ স্টেশন স্থাপনের পর থেকে নামটি ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়। ১৯৮৩ সালে থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয়।
২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, বাউফল উপজেলার জনসংখ্যা ছিল ৩,০৪,২৮৪ জন (পুরুষ ১,৪৪,৫৪৫ এবং মহিলা ১,৫৯,৭৩৯)। মোট পরিবার সংখ্যা ছিল ৬৭,৮৩৩। সাক্ষরতার হার ছিল ৫৭.১%। উপজেলায় ১টি পৌরসভা এবং ১৫টি ইউনিয়ন রয়েছে।
অর্থনীতিতে কৃষিকাজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ধান, পাট, আলু, ডাল, মরিচ ইত্যাদি প্রধান কৃষি ফসল। আম, কাঁঠাল, নারিকেল ইত্যাদি ফল উৎপাদন হয়। মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামারও রয়েছে। মৃৎশিল্প এখানকার এক উল্লেখযোগ্য কুটিরশিল্প। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে ১৩টি মহাবিদ্যালয়, ৫৫টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৪টি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, এবং প্রচুর প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা।
বাউফল উপজেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসও গৌরবোজ্জ্বল। কাছিপাড়ায় এম.এ. মজিদ বাচ্চু মিয়ার নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধ গড়ে উঠেছিল। বিভিন্ন স্থানে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা প্রতিরোধ গড়ে তোলে এবং গেরিলা যুদ্ধ করে।
উল্লেখযোগ্য স্থানগুলির মধ্যে ঘসেটি বেগমের কুঠিবাড়ি, পাকঢাল মিয়া বাড়ি মসজিদ, বাউফল কেন্দ্রীয় কালীবাড়ি মন্দির, কালীসুরিতে সৈয়দ আরেফিনের মাযার ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।