১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক গণহত্যা চালিয়েছিল। এই হত্যাকাণ্ডের স্থানগুলোকেই বধ্যভূমি বলা হয়। এই বধ্যভূমিতে বহু নিরীহ মানুষ, মুক্তিযোদ্ধা, বুদ্ধিজীবী, সাধারণ জনগণ, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা এবং সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের হত্যা করা হয়েছিল।
ঢাকার রায়ের বাজার বধ্যভূমি: রায়ের বাজার ইটখোলায় অবস্থিত এই বধ্যভূমি ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর রাতে বুদ্ধিজীবীদের গণহত্যার সাক্ষী। শিক্ষাবিদ, চিকিৎসক, সাংবাদিক, লেখক, চলচ্চিত্র নির্মাতা, প্রকৌশলীসহ অসংখ্য বুদ্ধিজীবীকে এখানে হত্যা করা হয়। ১৯৯৩ সালে সরকার এখানে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়, যা ১৯৯৬ থেকে ১৯৯৯ সালের মধ্যে সম্পন্ন হয়। স্মৃতিসৌধটি ৩.৫১ একর জমির উপর নির্মিত। স্থপতি ফরিদউদ্দিন আহমেদ ও স্থপতি জামি-আল-শফি এই স্মৃতিসৌধের নকশা করেছিলেন।
অন্যান্য বধ্যভূমি: রায়ের বাজার ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে আরও অনেক বধ্যভূমি ছিল। ওয়ার ক্রাইমস ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি প্রায় ৯৪২টি বধ্যভূমি শনাক্ত করেছে। এদের মধ্যে চট্টগ্রামে ১১৬টি বধ্যভূমি রয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ১২৯টি বধ্যভূমির সংরক্ষণ ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে, যার মধ্যে ঢাকা, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, নরসিংদী, মুন্সিগঞ্জ, টাঙ্গাইল, শেরপুর, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ, মানিকগঞ্জ, শরিয়তপুর, গাজীপুর, জয়পুরহাট, নওগাঁ, রাজশাহী, নাটোর, পাবনা, বগুড়া, রংপুর, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, দিনাজপুর, চট্টগ্রাম, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, যশোর, ঝিনাইদহ, খুলনা, পিরোজপুর, চুয়াডাঙ্গা, বাগেরহাট, ভোলা এবং কুমিল্লা জেলার বধ্যভূমিগুলো অন্তর্ভুক্ত। তবে মোট কতগুলি বধ্যভূমি ছিল তার সঠিক সংখ্যা নির্ণয় করা এখনও সম্ভব হয়নি।
বর্তমান অবস্থা: বহু বধ্যভূমি অযত্ন অবহেলায় পড়ে আছে। অনেকেই এর উপর অবৈধ দখল করেছে। সরকারের সংরক্ষণ উদ্যোগ থাকলেও, বাস্তবায়নে অনেক সমস্যা দেখা দিচ্ছে। জমি অধিগ্রহণ, দুর্নীতি এবং দায়িত্বে অবহেলা প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিচ্ছে। আমরা আপনাকে আরও তথ্য দিয়ে আপডেট করব যখন তা উপলব্ধ হবে।