রংপুর: উত্তরবঙ্গের ঐতিহ্যবাহী শহর
বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত রংপুর শুধুমাত্র একটি শহর নয়, বরং ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও প্রকৃতির এক অপূর্ব সমন্বয়। ১৭৬৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর রংপুর জেলার বিভাগীয় সদর দপ্তর হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। ১৮৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এটি বাংলাদেশের প্রাচীনতম পৌর কর্পোরেশন। ৭০০ বছরের ঐতিহ্য বয়ে বহনকারী এই শহর ‘শতরঞ্জি’, ‘হাড়িভাঙ্গা আম’ ও ‘তামাক’ এর জন্য বিখ্যাত। রংপুরের সৌন্দর্য ও ঐতিহ্য এটিকে ‘বাহের দেশ’ হিসেবে পরিচিত করেছে।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব:
১৫৭৫ সালে মুঘল সেনাপতি রাজা মানসিংহ রংপুর জয় করেন। মুঘল আমলে রংপুর তিন প্রশাসনিক এলাকায় বিভক্ত ছিল। ‘মুঘলবাসা’ ও ‘মুঘলহাট’ নামক স্থানের নামগুলি মুঘল শাসনের স্মৃতি বহন করে। ১৮ শতকের শেষভাগে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে রংপুরে ফকির-সন্ন্যাসী বিদ্রোহ সংঘটিত হয়। ১৯৪৬ সালের অক্টোবরে এখানে উত্তরবঙ্গের কৃষক নেতাদের একটি সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং নভেম্বর মাসে তেভাগা আন্দোলন শুরু হয়। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে রংপুরের অবদানও অসামান্য।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান:
রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, কারমাইকেল কলেজ, রংপুর ক্যাডেট কলেজ, বীর উত্তম শহীদ সামাদ স্কুল এন্ড কলেজ শহরের শিক্ষা ব্যবস্থাকে সমৃদ্ধ করেছে। ১৮৩২ সালে প্রতিষ্ঠিত রংপুর জিলা স্কুল বৃহত্তর রংপুরের প্রাচীনতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
দর্শনীয় স্থান:
তাজহাট জমিদার বাড়ি, পীরগাছা জমিদার বাড়ি, মিঠাপুকুর তিনকাতারের মসজিদ, লালদিঘি মসজিদ, রংপুর টাউন হল, জাদু নিবাস, বিভিন্ন মন্দির ও মসজিদ ইত্যাদি রংপুরের ঐতিহাসিক ও স্থাপত্যিক গুরুত্ব বহন করে।
অর্থনীতি:
আশেপাশের জেলাগুলোর জন্য রংপুর একটি বাণিজ্যিক কেন্দ্র। অনেক সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংক, বীমা সংস্থা, হোটেল, রেস্টুরেন্ট এখানে অবস্থিত। কৃষি, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড রংপুরের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
জনসংখ্যা:
২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী রংপুরের জনসংখ্যা ৩১,৬৯,৬১৫। জনসংখ্যার অধিকাংশই মুসলিম, অন্যান্য ধর্মের মানুষও এখানে বসবাস করেন। সাঁওতাল, রাজবংশী এবং ওঁরাও জাতিগোষ্ঠীও রংপুরে বসবাস করে।
রংপুর উত্তরবঙ্গের একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর যার ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব অপরিসীম। এই শহরের সৌন্দর্য, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি দেখার মতো।