পাবনা: বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগের অন্তর্গত একটি ঐতিহ্যবাহী ও গুরুত্বপূর্ণ শহর। পদ্মা নদীর উত্তর তীরে অবস্থিত পাবনা শহর, পাবনা জেলার প্রশাসনিক সদর। এটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঐতিহাসিক স্থাপনা এবং সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জন্য পরিচিত।
- *ভৌগোলিক অবস্থান ও জনসংখ্যা:** পাবনা জেলা 2376.13 বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এবং এর জনসংখ্যা প্রায় 2523179। উত্তরে নাটোর ও সিরাজগঞ্জ, দক্ষিণে পদ্মা নদী, রাজবাড়ী ও কুষ্টিয়া, পূর্বে মানিকগঞ্জ ও যমুনা নদী এবং পশ্চিমে পদ্মা নদী, নাটোর ও কুষ্টিয়া জেলায় পাবনা জেলার সীমানা নির্ধারিত। গঙ্গা (পদ্মা), বড়াল, যমুনা, ইছামতি, আত্রাই, হুরাসাগর, চিকনাই নদী এবং চলন বিল পাবনার উল্লেখযোগ্য জলাশয়।
- *অর্থনীতি:** পাবনার অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর। ধান, পাট, গম, আখ, সরিষা, ডাল, তুঁত গাছ, এবং বিভিন্ন ধরণের শাকসবজি এখানে উৎপাদিত হয়। পাশাপাশি, নতুন নতুন শিল্প কারখানা এবং উন্নয়নশীল গার্মেন্টস শিল্পও এখানে অর্থনৈতিক অবদান রাখছে। স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের মতো বৃহৎ ওষুধ কোম্পানির কারখানাও পাবনায় অবস্থিত।
- *ঐতিহাসিক ঘটনা:** পাবনার ইতিহাস সমৃদ্ধ। ১৮৭৩ সালের পাবনা কৃষক বিদ্রোহ বাংলার ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। মুক্তিযুদ্ধেও পাবনায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে। টেলিফোন এক্সচেঞ্জ কম্পাউন্ড, মাধবপুর, নগরবাড়ি, পাইকরহাটি, হাদল, ডেমরা, গোপালপুর, মাজাট, রতনপুর, চিকনাই নদীর পাড়ে রেল সেতু এবং নাগডেমরা ইউনিয়নের ধূলাউড়ি ফকির পাড়ার মতো স্থান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
- *উল্লেখযোগ্য স্থান:** পাবনায় অনেক ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ স্থান রয়েছে। এডওয়ার্ড কলেজ (১৮৯৮), পাবনা জেলা স্কুল (১৮৫৩), ভারারা মসজিদ, জোড় বাঙ্গালা মন্দির, লালন শাহ সেতু, হার্ডিঞ্জ ব্রিজ, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা মানসিক হাসপাতাল (বাংলাদেশের বৃহত্তম মানসিক হাসপাতাল), এবং অন্যান্য প্রত্নস্থান এই শহরকে আরও সমৃদ্ধ করেছে। রাসুন্দরী দেবী, বাংলা সাহিত্যের প্রথম পূর্ণাঙ্গ আত্মজীবনী রচয়িতা, পাবনায় জন্মগ্রহণ করেন।
- *সংস্কৃতি:** পাবনায় ধুয়া গান, বারাসে গান, জারি গান, সারি গান, যাগ গান, তত্ত্বমূলক গান, মেয়েগান, লোকগাথা, প্রবাদ-প্রবচন, নানা ধরণের খেলাধুলা প্রভৃতি লোকসংস্কৃতি প্রচলিত।
পাবনা একটি গতিশীল শহর যা ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অসাধারণ সমন্বয় বহন করে।