গাইবান্ধা: উত্তরাঞ্চলের ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মেলবন্ধন
বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত গাইবান্ধা জেলা, রংপুর বিভাগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জেলা। প্রায় ২১১৪.৭৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই জেলাটির জনসংখ্যা প্রায় ২৩ লক্ষ ৭৯ হাজারেরও বেশি। ২৫°০২´ থেকে ২৫°৩৯´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°১১´ থেকে ৮৯°৪৬´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত এই জেলাটি উত্তরে কুড়িগ্রাম ও রংপুর, দক্ষিণে বগুড়া, পূর্বে জামালপুর ও কুড়িগ্রাম এবং পশ্চিমে দিনাজপুর, জয়পুরহাট ও রংপুর জেলার সাথে সীমান্ত ভাগ করে নিয়েছে। ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, তিস্তা, করতোয়া, বাঙ্গালী ও ঘাঘট নদীর মতো প্রধান নদী গাইবান্ধার ভৌগোলিক সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করেছে।
- *ঐতিহাসিক গুরুত্ব:** কথিত আছে, প্রায় ৫২০০ বছর আগে গোবিন্দগঞ্জ এলাকায় বিরাট রাজার রাজধানী ছিল। এই জেলা বিভিন্ন যুগে মৌর্য, গুপ্ত, পাল এবং কামরূপ রাজ্যের অংশ ছিল। ১৭৮৩ সালে অতিরিক্ত কর আদায়ের বিরুদ্ধে, ১৯২১ সালে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন এবং ১৯৪৬ সালে তেভাগা আন্দোলনের মতো গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী এই ভূমি। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে গাইবান্ধাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। পলাশবাড়ী, গোবিন্দগঞ্জ, সুন্দরগঞ্জ, সাঘাটা উপজেলায় মুক্তিযুদ্ধের নানা সংঘর্ষ ও বর্বরতা ঘটেছিল। গাইবান্ধায় ৬টি বধ্যভূমি এবং ৬টি গণকবর আছে যা মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহতার প্রমাণ বহন করে।
- *অর্থনীতি:** গাইবান্ধার অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর। ধান, পাট, গম, আলু প্রধান ফসল। কৃষি ছাড়াও ব্যবসা, পরিবহন, চাকুরি ইত্যাদি অর্থনীতিতে অবদান রাখে। বিভিন্ন কুটির শিল্প, যেমন স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প ইত্যাদিও এখানে বিকাশ লাভ করেছে।
- *শিক্ষা ও সংস্কৃতি:** জেলায় অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য গাইবান্ধা সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়, গাইবান্ধা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, এবং বিভিন্ন কলেজ। গাইবান্ধার লোকসংস্কৃতি সমৃদ্ধ। পল্লীগীতি, ভাওয়াইয়া, জারীগান প্রভৃতি প্রচলিত।
- *দর্শনীয় স্থান:** গোবিন্দগঞ্জের বর্ধনকুঠি, নলডাঙ্গার জমিদার বাড়ি, বামনডাঙ্গার জমিদার বাড়ি, গোবিন্দগঞ্জে রাজা বিরাটের প্রাসাদ (ঐতিহাসিক), গাইবান্ধা সদরের মীরের বাগান মসজিদ- এই সব দর্শনীয় স্থান গাইবান্ধার পর্যটন ক্ষেত্রকে সমৃদ্ধ করেছে।
গাইবান্ধা, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, প্রকৃতি ও আধুনিকতার মেলবন্ধনে এক অনন্য জেলা। এর সমৃদ্ধ ইতিহাস এবং উন্নয়নের সম্ভাবনার জন্য এটি ভবিষ্যতেও বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা যায়।