বিদেশে কর্মসংস্থান: বাংলাদেশের একটি জাতীয় চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ
প্রতিবছর বাংলাদেশে ২০ থেকে ২২ লাখ তরুণ-তরুণী শ্রমবাজারে যুক্ত হলেও, দেশে পর্যাপ্ত সংখ্যক শোভন কর্মসংস্থানের অভাব রয়েছে। এই অভাবের কারণে বহু বাংলাদেশি তরুণ-তরুণী উন্নত জীবন ও অর্থনৈতিক উন্নতির আশায় বিদেশে কর্মসংস্থানের সন্ধানে পাড়ি জমাচ্ছেন। জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি)-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৩ সালে প্রতি ঘণ্টায় গড়ে দেড়শো বাংলাদেশি বিদেশে গেছেন। কাজের সন্ধানে বিদেশ যাওয়া মানুষের সংখ্যা প্রতি বছর বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০২০ সালে করোনা মহামারীর কারণে এই সংখ্যা কমে গিয়েছিল। ২০২১ সালে এই সংখ্যা ৬ লাখ ১৭ হাজারের বেশি ছিল।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো স্বল্পশিক্ষিত তরুণদের জন্য প্রধান গন্তব্য হয়ে উঠেছে। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, ওমান ইত্যাদি দেশে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি কর্মী রয়েছেন। অনেকে ঝুঁকিপূর্ণ পথে, যেমন ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে, ইউরোপে অবৈধভাবে প্রবেশের চেষ্টা করেন। এতে অনেকেরই মৃত্যু হয়, আবার অনেকে কারাগারে বন্দী হন।
দেশে শোভন কর্মসংস্থানের অভাবের কারণে এই অবস্থা তৈরি হচ্ছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)-এর নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হানের মতে, শোভন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বড় ধরনের ব্যর্থতা রয়েছে। তিনি দক্ষ জনশক্তি উন্নয়ন এবং চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষা ব্যবস্থা পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছেন।
সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রতিবছর শ্রমবাজারে যোগদানকারী তরুণ-তরুণীর সংখ্যার তুলনায় কর্মসংস্থানের সুযোগ কম। ২০২৩ সালে রেকর্ড সংখ্যক ১৩ লাখের বেশি কর্মী বিদেশে গেছেন। অনেক প্রবাসী দেশে ফিরে আসেন, কিন্তু তাদের প্রকৃত সংখ্যা জানা যায় না। ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালে ৮৬ হাজার ৬২১ জন প্রবাসী দেশে ফিরে এসেছেন।
প্রবাসী আয়ের বিষয়েও উদ্বেগ রয়েছে। সৌদি আরবে প্রচুর বাংলাদেশি কর্মী থাকলেও, রেমিট্যান্সের পরিমাণ আশানুরূপ বৃদ্ধি পাচ্ছে না। এ বছর বিদেশে যাওয়া কর্মীর ৬০ শতাংশ গেছে সৌদি আরবে। গত দুই মাসে বিদেশে কর্মসংস্থানের ৮০ শতাংশের বেশি সৌদিতে। বিদেশে কর্মসংস্থানের একক দেশ নির্ভরতার ঝুঁকি রয়েছে। সরকার নতুন শ্রমবাজার তৈরির চেষ্টা করলেও, তা সীমিত সাফল্য পেয়েছে। বিশেষজ্ঞরা অভিবাসন খাতের বৈষম্য দূর করার জন্য সরকারের নতুন পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছেন। এছাড়াও অনেক শিক্ষিত তরুণ-তরুণী উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যান, তাদের ফিরে আসার বিষয়েও অনিশ্চয়তা রয়েছে।
বিদেশে কর্মসংস্থান একটি জটিল সমস্যা যা বহুমাত্রিক দিক নিয়ে কাজ করে। দক্ষ জনশক্তি উন্নয়ন, শোভন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, নতুন শ্রমবাজার অন্বেষণ এবং অবৈধ অভিবাসন প্রতিরোধের মাধ্যমে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা সম্ভব।