মালদ্বীপ: ভারত মহাসাগরের মুক্তো ছড়ানো দ্বীপরাষ্ট্র
দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম মনোমুগ্ধকর দেশ মালদ্বীপ। প্রায় ১২০০ ছোট ছোট প্রবাল দ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত এই দ্বীপরাষ্ট্রটির অপরূপ সৌন্দর্য ও স্বচ্ছ পানির সমুদ্রসৈকত বিশ্বজুড়ে পর্যটকদের আকর্ষণ করে। এটি বিশ্বের সর্বনিম্ন দেশ, যেখানে সর্বোচ্চ উচ্চতা মাত্র ২.৩ মিটার। ধিবেহী ভাষাভাষী এই দেশের রাজধানী মালে। মালদ্বীপের নামকরণ নিয়ে বিভিন্ন মত রয়েছে। কিছু মতে 'মালাদ্বীপ' (ফুলের মালার দ্বীপ), আবার কারও মতে 'মালে দিভেহী রাজ্য' (মালে দ্বীপ রাজ্য) থেকে এর নামকরণ। ইবনে বতুতা ১৩৪৩ খ্রিস্টাব্দে মালদ্বীপ ভ্রমণ করে 'মহল দিবিয়াত' (রাজপ্রাসাদের দ্বীপ) নামে উল্লেখ করেছিলেন, যা বর্তমানে দেশটির রাষ্ট্রীয় প্রতীকেও ব্যবহৃত হয়।
ঐতিহাসিক দিক: মালদ্বীপের ইতিহাস বহু শতাব্দী পুরোনো। প্রাচীন বৌদ্ধ ও দ্রাবিড় জনগোষ্ঠীর আগমনের পর মুসলিমদের আগমন ঘটে দ্বাদশ শতকে। ১১৫৩ থেকে ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত ৮০০ বছর ধরে ৯২ জন সুলতান শাসন করেছেন। ১৫০৭ সালে পর্তুগিজরা মালদ্বীপে আগমন করে, কিন্তু ১৫৭৩ সালে সুলতান থাকুরুফানি আল-আযম তাদের বহিষ্কার করেন। ১৮৮৫ সালে ব্রিটিশদের অধীনে আসে মালদ্বীপ এবং ১৯৬৫ সালের ২৬ জুলাই পূর্ণ স্বাধীনতা অর্জন করে। ১৯৫৩ সালে সালতানাতের অবসান হয় এবং মালদ্বীপ প্রজাতন্ত্র হয়। প্রথম রাষ্ট্রপতি ছিলেন আমিন দিদি।
অর্থনীতি ও পর্যটন: প্রাচীনকালে মৎস্য শিল্প ছিল মালদ্বীপের প্রধান অর্থনৈতিক ভিত্তি। বর্তমানে পর্যটন শিল্প দেশটির মূল অর্থনৈতিক অবদান রাখে। মোট আয়ের ২৮% এবং বৈদেশিক আয়ের ৬০% আসে পর্যটন থেকে। ১৯৮৯ সালে অর্থনৈতিক সংস্কারের ফলে বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং গত এক দশকে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৭.৮% এর বেশি ছিল।
ভূগোল ও জনসংখ্যা: মালদ্বীপের জনসংখ্যা প্রায় ৫ লক্ষ। ১০০% মুসলমান। দেশটিতে প্রায় 26 টি অ্যাটোল এবং ১১৯২টি ক্ষুদ্র দ্বীপ রয়েছে, যার মধ্যে ২০০টি বাসযোগ্য। ইব্রাহিম নাসির আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর মালদ্বীপের প্রধান প্রবেশদ্বার।
রাজনীতি: মালদ্বীপে রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকার ব্যবস্থা বিদ্যমান। ৫০ সদস্যের একটি সংসদ (মজলিস) রয়েছে, যার মধ্যে ৮ জন সদস্য রাষ্ট্রপতি নিয়োগ করেন। ২০০৫ সালে দেশটিতে প্রথম রাজনৈতিক দল গঠিত হয়।