বাংলাদেশে অভিবাসন: একটি বাস্তবতা
অভিবাসন, এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে মানুষের স্থানান্তরের প্রক্রিয়া, বাংলাদেশের অর্থনীতি ও সমাজে গভীর প্রভাব ফেলে আসছে। গ্রাম থেকে শহরে, বা এক দেশ থেকে অন্য দেশে, এই স্থানান্তরের পেছনে রয়েছে জীবিকার সন্ধান, উন্নত জীবনযাপন, এবং ভালো ভবিষ্যতের আশা। তথ্য প্রযুক্তির অভূতপূর্ব উন্নয়ন এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতিতে অভিবাসনের ধরণ ও প্রকৃতিও বদলে গেছে।
- *অর্থনৈতিক প্রভাব:** বাংলাদেশের অস্থায়ী অভিবাসীদের প্রেরিত অর্থ দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। এই অর্থ দেশের বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার বাড়ায় এবং বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে সাহায্য করে। বিশ্বের সেই কয়েকটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম যেখানে অস্থায়ী অভিবাসীদের প্রেরিত অর্থ জিডিপির ১০% এর সমান। এই অর্থ শুধুমাত্র ধনী পরিবারকেই নয়, দরিদ্র পরিবারগুলোকেও তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নতনে সহায়তা করে।
- *নগরায়ণের প্রভাব:** ১৯০১ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত ৯০ বছরে বাংলাদেশে শহরের জনসংখ্যা ৩০ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে, যখন গ্রামাঞ্চলের জনসংখ্যা বেড়েছে মাত্র ৩ গুণ। স্বাধীনতার পর নগরায়ণ আরও ত্বরান্বিত হয়। ১৯৭৪ সালের পূর্বে বাংলাদেশে কোন শহরের জনসংখ্যা ১ মিলিয়ন ছিল না, কিন্তু বর্তমানে ঢাকা ১০ মিলিয়ন জনসংখ্যার একটি মেগাসিটিতে পরিণত হয়েছে। এই দ্রুত নগরায়ণের প্রধান কারণ হলো গ্রাম থেকে শহরে অভিবাসন।
- *অভিবাসনের কারণ:** গ্রাম থেকে শহরে অভিবাসনের অন্যতম কারণ হলো জীবিকার সন্ধান। অসম ভূমি ব্যবস্থা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, এবং কৃষিক্ষেত্রে সীমিত সুযোগ মানুষকে গ্রাম ছেড়ে শহরে আসতে বাধ্য করে। শহরাঞ্চলে উন্নত কর্মসংস্থানের সুযোগ, উচ্চ আয়ের আশা, এবং শিক্ষার সুযোগ গ্রামবাসীদের আকর্ষণ করে।
- *অভিবাসনের প্রভাব:** গ্রাম থেকে শহরে অভিবাসন দ্বিমুখী প্রভাব ফেলে। একদিকে এটি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ায়, অন্যদিকে এটি শহরের অবকাঠামো, পরিবেশ, এবং সামাজিক ব্যবস্থার ওপর চাপ সৃষ্টি করে। বস্তিবাসীদের জীবনযাত্রার মান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবা উন্নয়নের দিকে সরকার ও সংশ্লিষ্ট সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা প্রয়োজন।
- *উপসংহার:** বাংলাদেশের অভিবাসন প্রক্রিয়া একটি জটিল এবং গতিশীল বিষয়। এই প্রক্রিয়াটির ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুটি দিক রয়েছে। সুষম উন্নয়ন এবং সকলের জন্য সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে এই প্রক্রিয়াটিকে আরও সুন্দর আকারে গড়ে তোলা সম্ভব।