নারী অভিবাসন

আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮:০৬ পিএম

বাংলাদেশে নারী অভিবাসন: চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নারী অভিবাসন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিভিন্ন দেশে কর্মসংস্থানের সন্ধানে প্রতিবছর লাখ লাখ নারী বিদেশে যান, রেমিট্যান্স প্রেরণ করে পরিবার ও দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখেন। তবে, অভিবাসনের এই যাত্রাপথ সবসময়ই সুগম নয়। নারী অভিবাসীরা প্রায়ই শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, শোষণ এবং অন্যান্য বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হন।

সংখ্যা ও প্রবণতা:

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান রেফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিট (রামরু) এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ৯ লাখ ৬ হাজার ৩৫৫ জন পুরুষ ও নারী কর্মী বিদেশ গেছেন। ২০২৩ সালের তুলনায় এটি প্রায় ৩০.৮% কম। উল্লেখযোগ্যভাবে, নারী অভিবাসনের হারও কমেছে। ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত মাত্র ৫৪ হাজার ৬৯৬ জন নারী বিদেশ গেছেন, যা মোট অভিবাসীর ৬.০৩%। কোভিডকালীন সময় বাদ দিলে গত ১০ বছরে এটি নারী অভিবাসনের সর্বনিম্ন রেকর্ড।

চ্যালেঞ্জ:

  • শোষণ ও নির্যাতন: অনেক নারী অভিবাসী গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করেন এবং শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হন। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে এ ধরনের ঘটনা বেশি ঘটে।
  • অনিরাপদ অভিবাসন: অনেক নারী দালালের মাধ্যমে অবৈধভাবে বিদেশে যান, যার ফলে তারা প্রতারিত এবং শোষিত হন।
  • স্বাস্থ্যগত সমস্যা: কাজের চাপ, অপর্যাপ্ত খাদ্য, স্বাস্থ্যসেবা, আবহাওয়ার প্রতিকূলতায় নারী অভিবাসীদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে থাকে।
  • সামাজিক পুনর্বাসন: দেশে ফিরে আসার পর অনেক নারী সামাজিকভাবে অবহেলিত ও অনিরাপদ অবস্থায় থাকেন।
  • অপর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ও তথ্য: অভিবাসন প্রক্রিয়া সম্পর্কে অপর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ও তথ্যের অভাব অনেক সমস্যার জন্য দায়ী।

সমাধান:

  • সরকারের ভূমিকা: নারী অভিবাসীদের সুরক্ষা ও কল্যাণ নিশ্চিত করার জন্য সরকারের কঠোর নীতিমালা প্রয়োজন। দূতাবাসগুলিকে আরো সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে এবং নির্যাতনের শিকার নারীদের জন্য ত্বরিত সহায়তা প্রদান করতে হবে। দক্ষতা বিকাশে প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম বৃদ্ধি করা উচিত।
  • এনজিও ও সিভিল সোসাইটি: এনজিও ও সিভিল সোসাইটির সক্রিয় ভূমিকা অপরিহার্য। তারা সচেতনতা বৃদ্ধি, প্রশিক্ষণ প্রদান এবং নারী অভিবাসীদের জন্য পুনর্বাসন প্রোগ্রাম চালানোর মাধ্যমে অবদান রাখতে পারে।
  • আন্তর্জাতিক সহযোগিতা: আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সাথে সহযোগিতা করে নারী অভিবাসীদের অধিকার রক্ষা করা উচিত।

উপসংহার:

বাংলাদেশে নারী অভিবাসন একটি জটিল বিষয়। সমস্যাগুলি মোকাবেলা করার জন্য সরকার, সিভিল সোসাইটি এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। শুধুমাত্র এভাবেই নারী অভিবাসীদের নিরাপত্তা এবং কল্যাণ নিশ্চিত করা সম্ভব।

মূল তথ্যাবলী:

  • ২০২৪ সালে নারী অভিবাসনের হার ২০২৩ সালের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।
  • নারী অভিবাসীরা প্রায়ই শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হন।
  • অনিরাপদ অভিবাসন এবং প্রতারণার শিকার হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
  • দক্ষতা বিকাশ, প্রশিক্ষণ ও তথ্য প্রদানের মাধ্যমে নারী অভিবাসীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
  • সরকার, সিভিল সোসাইটি এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে ন্যায়বিচার ও সুরক্ষা প্রদান করা যেতে পারে।

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।

গণমাধ্যমে - নারী অভিবাসন

২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৬:০০ এএম

রামরুর প্রতিবেদনে নারী শ্রমিকদের অভিবাসন হ্রাসের তথ্য প্রকাশ পেয়েছে।

১ জানুয়ারী ২০২৪, ৬:০০ এএম

নারী অভিবাসনের হার কমেছে।