প্রশিক্ষণ: কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির এক অপরিহার্য মাধ্যম
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে প্রশিক্ষণের গুরুত্ব অপরিসীম। সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতেই কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধি, কর্মক্ষমতা উন্নয়ন এবং নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রশিক্ষণের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রাচীনকাল থেকেই চীন, মিশর ও ভারতে সরকারি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের প্রচলন ছিল। আধুনিক যুগে, লর্ড ওয়েলেসলি ১৭৯৮-১৮০৫ সালে ভারতীয় সিভিল সার্ভিসে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা চালু করেন, যার প্রভাব বাংলাদেশের প্রশিক্ষণ ব্যবস্থার উপরও পড়েছে।
ব্রিটিশ আমল থেকে শুরু করে বর্তমানে, বাংলাদেশে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা বিভিন্ন পর্যায়ে বিকশিত হয়েছে। ষাটের দশকে মার্কিন সহায়তায় কুমিল্লা ও পেশোয়ারে পল্লী একাডেমী, ঢাকা, লাহোর ও করাচীতে জাতীয় গণপ্রশাসন প্রতিষ্ঠান (NIPA) প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৭১ সালের পর নতুন প্রশাসনিক চাহিদা পূরণের জন্য সিভিল অফিসার্স ট্রেনিং একাডেমী এবং ঢাকার জাতীয় গণপ্রশাসন প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম অব্যাহত ছিল। ১৯৭৭ সালে প্রশাসনিক স্টাফ কলেজ এবং ১৯৮৪ সালে সাভারে বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (BAPTC) প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে প্রশিক্ষণ ব্যবস্থাকে আরও সুসংগঠিত করা হয়। চট্টগ্রাম, ঢাকা, খুলনা ও রাজশাহীতে আঞ্চলিক লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়।
BAPTC তিন পর্যায়ের প্রশিক্ষণ প্রদান করে: বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ (সহকারী সচিব পর্যায়), প্রশাসন ও উন্নয়ন বিষয়ক উচ্চতর প্রশিক্ষণ (উপসচিব পর্যায়) এবং সিনিয়র স্টাফ কোর্স (যুগ্মসচিব পর্যায়)। শুধুমাত্র সরকারি কর্মকর্তা নয়, বেসরকারি সংস্থা, বিশেষ করে BRAC, ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ প্রদান করে। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ৩২৫টি সরকারি প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যার মধ্যে ২৫টি প্রধান প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানগুলিতে বক্তৃতা, অংশগ্রহণমূলক পদ্ধতি, শারীরিক ব্যায়াম, মাঠ পরিদর্শন প্রভৃতি পদ্ধতিতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
শিক্ষক প্রশিক্ষণে সরকারের গুরুত্ব অত্যন্ত স্পষ্ট, কারণ প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা সর্বাধিক। তবে প্রশিক্ষণের মান বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যেমন জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (NIPORT), বাংলাদেশ রেশম গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট ইত্যাদি নিজস্ব ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। সবমিলে, প্রশিক্ষণ বাংলাদেশের উন্নয়নে এক অপরিহার্য উপাদান, এবং এর মান উন্নয়নে নিয়মিত মূল্যায়ন ও উন্নত পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে এগিয়ে যেতে হবে।