প্রবাসী কর্মী: অর্থনীতির অবিচ্ছেদ্য অংশ ও চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন
বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান ভরসা হলো প্রবাসী আয়। ১৯৭৬ সাল থেকে বিদেশে কর্মী পাঠানো শুরু হলেও গত কয়েক দশকে এই খাতে নানা উত্থান-পতন দেখা গেছে। প্রবাসী কর্মীদের দ্বারা অর্জিত রেমিট্যান্স দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বৃদ্ধি, অবকাঠামো উন্নয়ন, এবং দারিদ্র্য বিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।
বিভিন্ন সরকারি সংস্থার পরিসংখ্যানে প্রবাসী কর্মীর সংখ্যা নিয়ে কিছুটা অস্পষ্টতা দেখা যায়। বাংলাদেশ জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) এই কর্মীদের জন্য ছাড়পত্র প্রদান করে। বিএমইটি'র তথ্য বলছে, ১৯৭৬ সাল থেকে ২০২৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ১ কোটি ৫৮ লাখ ৬৯ হাজার ৮৭৭ জন কর্মী বিএমইটির ছাড়পত্র নিয়ে বিদেশে গেছেন। তবে, একই ব্যক্তি বারবার বিদেশে গেলে তাকে একাধিকবার গণনা করা হয়েছে। আবার বহু কর্মী অবৈধভাবেও বিদেশে গেছেন, যাদের সংখ্যা নির্ণয় করা কঠিন।
প্রধানমন্ত্রী ও সংসদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বের ১৭৬টি দেশে ১ কোটি ৪৯ লাখের বেশি বাংলাদেশী কর্মী কর্মরত আছেন। তবে, জনশুমারির তথ্য বলছে বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসীর সংখ্যা ৫০ লাখ। এই সংখ্যাগত গরমিলের কারণ স্পষ্ট নয়। বিদেশে স্থায়ীভাবে বসবাসকারী, উচ্চশিক্ষার্থী ও কর্মীর তথ্য পৃথকভাবে সংরক্ষণ না করায় এই অস্পষ্টতা তৈরি হয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোই বাংলাদেশি কর্মীদের প্রধান গন্তব্য। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, ও কাতার এই ক্ষেত্রে শীর্ষে। তবে, এই দেশগুলোতে শ্রমবাজারের উত্থান-পতন প্রবাসী কর্মসংস্থানের উপর গুরুতর প্রভাব ফেলে। কর্মী পাঠানোর সংখ্যা এক দেশের উপর অতিরিক্ত নির্ভরতা ঝুঁকিপূর্ণ। নতুন শ্রমবাজার তৈরি করা জরুরী।
প্রবাসী কর্মীদের অনেক সময় দুর্ভোগের মুখোমুখি হতে হয়। অনিয়মিত ভাবে কাজের উদ্দেশ্যে বিদেশে যাওয়া, বেতন-ভাতা অনাদায়, শারীরিক এবং মানসিক নিপীড়ন সহ বিভিন্ন সমস্যা এই খাতে প্রচলিত। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এই সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছে তবে আরও কিছু করার অবকাশ থাকা প্রয়োজন।
সরকার বিভিন্ন গবেষণা এবং উদ্যোগের মাধ্যমে নতুন শ্রমবাজার তৈরির চেষ্টা করছে। তবে দক্ষ কর্মী পাঠানোর দিকে জোর দেওয়া হচ্ছে বেশি। একক দেশের উপর নির্ভরতা কমাতে হলে নতুন শ্রমবাজারের অনুসন্ধান এবং দক্ষতা উন্নয়নে বিনিয়োগ জরুরী।