দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বলতে দুটি দেশের মধ্যকার পণ্য ও সেবার আদান-প্রদানকে বোঝায়। এটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। দীর্ঘ ইতিহাস ধরে বাংলাদেশ বিভিন্ন দেশের সাথে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্ক বজায় রেখেছে।
প্রাচীনকাল থেকে আধুনিক যুগ পর্যন্ত বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য:
প্রাচীন বাংলায় কৃষি ছিল অর্থনীতির মূল ভিত্তি। ধান, তিল, আখ, তেজপাতা, সুগন্ধী তেল, মসলিন, পান, সুপারি, নুন, নারকেল প্রভৃতি ছিল রপ্তানিযোগ্য পণ্য। সমুদ্রপথ এবং নদীপথ দিয়ে এই পণ্যগুলি বিভিন্ন দেশে যাত্রা করত। তাম্রলিপ্তি, চন্দ্রকেতুগড়, সমন্দর ছিল তৎকালীন প্রধান বাণিজ্য বন্দর।
মধ্যযুগে বস্ত্র, চাল, এবং অন্যান্য কৃষিপণ্য ছিল প্রধান রপ্তানি পণ্য। চট্টগ্রাম ও সাতগাঁও ছিল প্রধান বন্দর। পর্তুগিজ, ইংরেজ, ওলন্দাজ, ফরাসী ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলাদেশের বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
আধুনিক যুগের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য:
স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে। গার্মেন্টস, হিমায়িত খাদ্য, চামড়া প্রভৃতি রপ্তানি পণ্য হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানী প্রভৃতি দেশ প্রধান রপ্তানি গন্তব্য। আমদানির ক্ষেত্রে যন্ত্রপাতি, খনিজ তেল, খাদ্যশস্য প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে বাংলাদেশ ভারত, চীন, পাকিস্তানসহ অনেক দেশের সাথে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। তবে বাণিজ্য ঘাটতি একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিদ্যমান রয়েছে।
দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের গুরুত্ব:
দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, এবং দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) এর মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যকে আরও সহজ ও বর্ধিত করা যায়। তবে বাণিজ্য ঘাটতি, প্রতিযোগিতা, এবং বৈদেশিক মুদ্রার অস্থিরতা চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিদ্যমান থাকে। উভয় দেশের প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের চুক্তির শর্তাবলী ঠিক করা দরকার। সঠিক নীতিমালা গ্রহণ, এবং সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা এ ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।