বাংলাদেশের কৃষি ক্ষতি: একটি বাস্তবতা
বাংলাদেশ একটি কৃষিপ্রধান দেশ। দেশের অর্থনীতির অন্যতম মেরুদণ্ড কৃষি খাত। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে প্রতিবছরই কৃষি ক্ষেত্রে ব্যাপক ক্ষতি হয়। চলতি বছরের বিভিন্ন সময়ে ঘটে যাওয়া বন্যা, অতিবৃষ্টি, ঝড়, শৈত্যপ্রবাহ, তাপপ্রবাহ এবং পোকামাকড়ের আক্রমণ কৃষি খাতকে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
চট্টগ্রামে বন্যার ক্ষতি:
২০২৪ সালের আগস্ট মাসে চট্টগ্রামে ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে বন্যা দেখা দেয়। এতে চট্টগ্রাম জেলার ১৫টি উপজেলা ও নগরীর কিছু কিছু এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রাথমিক হিসেবে ৩৯৪ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ১ লাখ ৫৩ হাজার ১০৩ হেক্টর জমির ফসল এবং ১ হাজার ৯২২ হেক্টর সবজি বাগান পানিতে ডুবে যায়। আমন ধানের ক্ষেত্রে ২৫২ কোটি টাকার ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফটিকছড়ি, মীরসরাই উপজেলায় ক্ষতির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। ক্ষয়ক্ষতির পুরোপুরি চিত্র তুলে ধরার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে পরিদর্শন করছেন।
অন্যান্য এলাকার ক্ষতি:
চট্টগ্রাম ছাড়াও দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও কৃষি ক্ষেত্রে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। শেরপুর জেলায় বন্যার কারণে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এখানে ১ লাখ ৭৭ হাজার ৮০ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আউশ ও আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। দিনাজপুর জেলায় ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে ৫২ হেক্টর কৃষি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার অর্থনৈতিক ক্ষতি প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড় রিমাল ও অতিবৃষ্টির প্রভাবে ৫০টি জেলার প্রায় ৫ লাখ কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, যার আর্থিক ক্ষতি প্রায় ১ হাজার ৫৯ কোটি টাকা। পূর্বাঞ্চলে বন্যায় ২ লাখ ৮ হাজার ৫৭৩ হেক্টর ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, আর ১৪ লাখেরও বেশি কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এই ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা বলে কৃষি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
ক্ষতির প্রভাব এবং সমাধান:
এই কৃষি ক্ষতির প্রভাব খাদ্য নিরাপত্তা এবং দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপকভাবে পড়ছে। বাজারে কৃষিপণ্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পুনর্বাসন, বিনামূল্যে বীজ ও সার, নগদ অর্থ সহায়তা এবং বিভিন্ন সরকারি উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। তবে সামগ্রিক ক্ষতির পরিমাণ এখনও স্পষ্ট নয়। কৃষি বিশেষজ্ঞরা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় আধুনিক কৃষি পদ্ধতি ও জলবায়ু সহনশীল ফসল চাষের উপর জোর দিচ্ছেন। আরও তথ্য পাওয়া গেলে আমরা আপনাদের আপডেট করবো।