ঝিনাইগাতী

আপডেট: ৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২:৫৩ পিএম

ঝিনাইগাতী: শেরপুরের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা

বাংলাদেশের শেরপুর জেলার অন্তর্গত ঝিনাইগাতী উপজেলা অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক এলাকা। ২৪২.০৭ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই উপজেলা ২৫°০৪´ থেকে ২৫°১৬´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°৫৮´ থেকে ৯০°০৮´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত। উত্তরে ভারতের মেঘালয় রাজ্য, দক্ষিণে শেরপুর সদর ও শ্রীবর্দী উপজেলা, পূর্বে নালিতাবাড়ী উপজেলা এবং পশ্চিমে শ্রীবর্দী উপজেলা ঝিনাইগাতীর সীমান্ত গঠন করে।

জনসংখ্যা ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:

২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী ঝিনাইগাতীর জনসংখ্যা ছিল ১৬০,৪৫২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৭৯,৫৪৮ জন এবং মহিলা ৮০,৯০৪ জন। ধর্মীয়ভাবে, ১৫১,৫৩৯ জন মুসলিম, ৫,৫৩৭ জন হিন্দু, ৩,১০৪ জন খ্রিস্টান এবং ২৭২ জন অন্যান্য ধর্মাবলম্বী বাসিন্দা রয়েছে।

প্রশাসন ও ইতিহাস:

১৯৭৫ সালে ঝিনাইগাতী থানা গঠিত হয় এবং ১৯৮৩ সালে থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় ঝিনাইগাতী থানার নকশি বিওপি, কাটাখালি ব্রিজ সংলগ্ন এলাকা এবং অন্যান্য স্থানে পাকবাহিনীর উপর মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণ পরিচালিত হয়। নকশি যুদ্ধে ২৩ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং ৩৫ জন পাকসেনা নিহত হয়। জুলগাঁওয়ে একটি বধ্যভূমি এবং মেঘালয় সীমান্তবর্তী গজনীতে মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে একটি স্মৃতিফলক রয়েছে।

অর্থনীতি ও কৃষি:

ঝিনাইগাতীর অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর। জনগোষ্ঠীর ৭০.১৮% কৃষিকাজের সাথে জড়িত। ধান, গম, আলু, পিঁয়াজ, রসুন এবং শাকসবজি এখানকার প্রধান কৃষি ফসল। কাঁঠাল, কলা ও পেঁপে প্রধান ফল-ফলাদি। কুটিরশিল্প যেমন তাঁতশিল্প, স্বর্ণশিল্প, মৃৎশিল্প, লোহার কাজ, কাঠের কাজ, বাঁশের কাজ এবং সেলাই কাজ এখানে বিদ্যমান। উল্লেখযোগ্য রপ্তানিদ্রব্য হল ধান, চাল, কলা, শাকসবজি, পাথর এবং বালি।

শিক্ষা ও স্বাস্থ্য:

ঝিনাইগাতীর গড় শিক্ষার হার ৩৮.৭% (পুরুষ ৪১.২%, মহিলা ৩৬.৩%)। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে রয়েছে আলহাজ্ব শফিউদ্দিন আহাম্মদ কলেজ, ডাঃ সেরাজুল হক টেকনিক্যাল অ্যান্ড কৃষি ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউট, তিনানী আদর্শ কলেজ, ঝিনাইগাতী মহিলা আদর্শ মহাবিদ্যালয়, এবং আরও অনেক হাই স্কুল ও মাদ্রাসা। স্বাস্থ্যসেবার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র এবং উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে।

প্রাকৃতিক সম্পদ ও পর্যটন:

ঝিনাইগাতীর প্রধান নদী হল সোমেশ্বরী, চিলাখালী এবং মালিশি। এছাড়াও উল্লেখযোগ্য বিল রয়েছে যেমন সোনাইকরা বিল, ঢোলী বিল, পলকা বিল, বান্ধাপোল বিল, বাইদাধাঙ্গা বিল, রুরলী বিল ও গুর খাল। দর্শনীয় স্থানগুলির মধ্যে গজনী অবকাশ কেন্দ্র, সন্ধ্যাকুড় রাবার বাগান, মরিয়ম নগর মিশন এবং আয়নাপুর রাবার ড্যাম উল্লেখযোগ্য।

উপসংহার:

ঝিনাইগাতী উপজেলা শেরপুর জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ যা এর সমৃদ্ধ ইতিহাস, কৃষি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য পরিচিত। আমরা আশা করি ভবিষ্যতে এই উপজেলার উন্নয়ন আরও দ্রুততর হবে।

মূল তথ্যাবলী:

  • ঝিনাইগাতী উপজেলা শেরপুর জেলার অন্তর্গত।
  • এর আয়তন ২৪২.০৭ বর্গ কিলোমিটার।
  • ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী জনসংখ্যা ১৬০,৪৫২।
  • মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
  • কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি।
  • শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের উন্নয়নে প্রচেষ্টা অব্যাহত।

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।