নকলা: শেরপুরের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা
বাংলাদেশের শেরপুর জেলার অন্তর্গত নকলা উপজেলা একটি প্রশাসনিক এলাকা হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। প্রাচীন ইতিহাস ও সমৃদ্ধ সংস্কৃতির ধারক এই উপজেলার ভৌগোলিক অবস্থান, জনসংখ্যা, অর্থনীতি ও শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য নিচের আলোচনাটি পড়ুন।
ভৌগোলিক অবস্থান ও সীমানা:
নকলা উপজেলার আয়তন ১৭৩.৮৪ বর্গ কিমি। এটি ২৪°৫৩´ থেকে ২৫°০২´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°০৭´ থেকে ৯০°১৫´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত। উত্তরে নালিতাবাড়ী উপজেলা, দক্ষিণে জামালপুর সদর ও ময়মনসিংহ সদর উপজেলা, পূর্বে ফুলপুর ও হালুয়াঘাট উপজেলা এবং পশ্চিমে শেরপুর সদর উপজেলা নকলার সীমান্তবর্তী এলাকা। পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ ও কংস নদী এই উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়। কুর্শা বিল, বড়বিলা বিল ও বাইরকান্দি বিল এর উল্লেখযোগ্য জলাশয়।
জনসংখ্যা ও ধর্ম:
২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, নকলার জনসংখ্যা ১৮৯৬৮৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৯২৮৯৫ জন এবং মহিলা ৯৬৭৯০ জন। ধর্মীয়ভাবে, ১৮৫৬৬৬ জন মুসলমান, ৩৯৫৯ জন হিন্দু, ৩২ জন খ্রিস্টান এবং ২৮ জন অন্যান্য ধর্মের অনুসারী।
প্রশাসন ও ইতিহাস:
১৯৩০ সালে নকলা থানা গঠিত হয় এবং বর্তমানে এটি উপজেলা হিসেবে পরিচিত। নকলা নামের উৎপত্তি সম্ভবত আরবী ‘নাখলা’ শব্দ থেকে (খেজুরের বাগান), যা এ অঞ্চলের প্রাচীনত্বের ইঙ্গিত করে। মুক্তিযুদ্ধের সময়, ১৯৭১ সালে নারায়ণখোলা, গৌড়দ্বার, ড়ইতার ও চন্দ্রকোনায় পাকসেনাদের সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের তীব্র লড়াইয়ের ঘটনা ঘটে, যেখানে ২০ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ৯ ডিসেম্বর ১৯৭১ এ উপজেলা পাকিস্তানি বাহিনীর কবল থেকে মুক্ত হয়। চন্দ্রকোনা একসময় একটি গুরুত্বপূর্ণ নৌ-বন্দর ও ব্যবসায়িক কেন্দ্র ছিল।
অর্থনীতি ও কৃষি:
নকলার অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর। জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি (৬৯.৪০%), অকৃষি শ্রমিক (৩.৪৮%), ব্যবসা (১০.৬৭%) ইত্যাদি। প্রধান কৃষি ফসলের মধ্যে ধান, পাট, আখ, গম, ভুট্টা, ডাল, পিঁয়াজ, রসুন, হলুদ এবং শাকসবজি উল্লেখযোগ্য। আখের গুড়, কলা, পিঁয়াজ, রসুন, হলুদ এই উপজেলার প্রধান রপ্তানি দ্রব্য।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্য:
নকলার গড় শিক্ষার হার ৪৩%। এখানে ৪টি কলেজ, ১টি টেকনিক্যাল কলেজ, ৩৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৯৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ১৮টি মাদ্রাসা রয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, স্বাস্থ্য উপকেন্দ্র, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র এবং ক্লিনিক স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করে।
যোগাযোগ ব্যবস্থা:
নকলার যোগাযোগ ব্যবস্থা মোটামুটি ভালো। ১০৬ কিমি পাকা রাস্তা, ২ কিমি আধা-পাকা রাস্তা এবং ৪১৪ কিমি কাঁচা রাস্তা রয়েছে।
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান:
উপজেলায় ৩টি লাইব্রেরি, ২৭টি ক্লাব, ১টি সিনেমা হল, ৩০টি মহিলা সংগঠন, ১টি ললিতকলা একাডেমি এবং ১২টি খেলার মাঠ রয়েছে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ:
১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষ, ১৯৭৪ সালের কলেরা এবং ১৯৫৪ সালের বন্যা নকলা উপজেলায় ব্যাপক ক্ষতি সাধন করেছিল।
উপসংহার:
নকলা উপজেলা তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সমৃদ্ধ ইতিহাস, এবং বর্তমান উন্নয়নের চিত্র নিয়ে বাংলাদেশের মানচিত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান ধারণ করে আছে। এর ভবিষ্যৎ উন্নয়নের জন্য আরও পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের প্রয়োজন।