প্রাকৃতিক দুর্যোগ: বাংলাদেশের একটি বাস্তবতা
বাংলাদেশ প্রকৃতির কাছে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ একটি দেশ। প্রতিবছরই আমরা বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হই, যার ফলে জীবনহানি, অর্থনৈতিক ক্ষতি এবং ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সৃষ্টি হয়। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর মধ্যে রয়েছে ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, ভূমিকম্প, ভূমিধ্বস, নদীভাঙন, কালবৈশাখী ঝড়, টর্নেডো, জলোচ্ছ্বাস এবং আর্সেনিক দূষণ।
ঘূর্ণিঝড়: বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা ঘূর্ণিঝড়ের জন্য বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। ১৯৭০ সালের ভোলা ঘূর্ণিঝড়, যাকে 'গোর্কি' বলা হয়, ৫ লাখের অধিক মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল। ২০০৭ সালের সিডর ঘূর্ণিঝড় ও ২০০৯ সালের আইলা ঘূর্ণিঝড়ও প্রচুর ক্ষতি সাধন করেছিল। এই ঘূর্ণিঝড়গুলি সাধারণত অক্টোবর-নভেম্বর এবং এপ্রিল-মে মাসে আঘাত হানে। সমুদ্রের উপরের তীব্র বাতাস, ৩-১০ মিটার উঁচু ঢেউ, ও প্রচন্ড বৃষ্টিপাত এই দুর্যোগের বৈশিষ্ট্য।
বন্যা: বাংলাদেশের নিম্নভূমি ও নদী ব্যবস্থা বন্যার জন্য সংবেদনশীল। প্রচুর বৃষ্টিপাতের কারণে নদ-নদী প্লাবিত হয়ে জানমালের ক্ষতি করে। ১৯৮৮ এবং ১৯৯৮ সালের বন্যা বিশেষভাবে ধ্বংসাত্মক ছিল। মৌসুমি বন্যা, আকস্মিক বন্যা এবং জোয়ারসৃষ্ট বন্যা এই তিন ধরণের বন্যা বাংলাদেশে দেখা যায়।
ভূমিকম্প: বাংলাদেশের ভূ-প্রকৃতি ভূমিকম্পের প্রতি সম্পূর্ণ নিরাপদ নয়। দেশের উত্তরাঞ্চল এই দিক থেকে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। ১৮৯৭ সালের ভয়াবহ ভারতীয় ভূমিকম্পের প্রভাব বাংলাদেশে পড়েছিল।
ভূমিধ্বস: বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চল, বিশেষ করে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান এবং রাঙ্গামাটিতে ভূমিধ্বসের ঘটনা প্রায়ই ঘটে। প্রবল বৃষ্টিপাত এর মূল কারণ।
নদীভাঙন: বাংলাদেশের অনেক নদীর তীরে ভাঙনের ঘটনা প্রায়ই ঘটে। এর ফলে উর্বর কৃষিজমি হারিয়ে যায় এবং মানুষ গৃহহীন হয়। বিশেষ করে শরীয়তপুর জেলা নদীভাঙনের জন্য বিশেষভাবে সংবেদনশীল।
কালবৈশাখী: এপ্রিল-মে মাসে হঠাৎ করে আঘাত হানে এই প্রচণ্ড ঝড়। বজ্রপাত এবং প্রচন্ড বৃষ্টিপাত এর বৈশিষ্ট্য।
টর্নেডো: একটি ক্ষুদ্র কিন্তু প্রচণ্ড বিধ্বংসী ঝড় যা দেশের বিভিন্ন স্থানে দেখা যায়।
আর্সেনিক দূষণ: বাংলাদেশের অনেক স্থানের ভূগর্ভস্থ পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য বড়ো হুমকি। দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল এই দিক থেকে বিশেষভাবে সংবেদনশীল।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধ ও পুনর্বাসনের জন্য সরকার, বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা বিভিন্ন কাজ করে থাকে। তবে এই দুর্যোগের মোকাবেলায় জনসচেতনতা, উন্নত প্রযুক্তি ও সঠিক পরিকল্পনা অত্যন্ত জরুরী।