কামান্না

আপডেট: ৪ জানুয়ারী ২০২৫, ৩:২৭ এএম

কামান্না: একাত্তরের রক্তাক্ত স্মৃতি

১৯৭১ সালের ২৬ নভেম্বর, ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার কামান্না গ্রাম। মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে এ দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নৃশংস হামলায় ২৭ জন মুক্তিযোদ্ধা ও এক গৃহবধূসহ ২৯ জন নিহত হন। এই ঘটনায় কামান্না গ্রামের নাম চিরতরে লিখিত হয়ে আছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে। প্রতি বছর ২৬ নভেম্বর কামান্না দিবস পালন করা হয় শহীদদের স্মরণে।

ঘটনার বর্ণনা:

২৫ নভেম্বর রাতে প্রায় ৩৫ জন মুক্তিযোদ্ধা, সেনা কর্মকর্তা শমসের হোসেনের নেতৃত্বে কামান্না গ্রামের মাধব ভৌমিকের বাড়িতে আশ্রয় নেন। রাতে তাদের মধ্যে মনোমালিন্যের সৃষ্টি হলেও তারা ঘুমিয়ে পড়েন। এই তথ্য পাকিস্তানি বাহিনীর কাছে পৌঁছে গেলে তারা রাজাকারদের সহায়তায় মাধব ভৌমিকের বাড়ি ঘিরে ফেলে। রাতের অন্ধকারে হঠাৎ হামলা চালিয়ে তারা ২৭ জন মুক্তিযোদ্ধাকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। এই হত্যাকাণ্ডে এক গৃহবধূ, রঙ্গনেছাও নিহত হন। স্থানীয়রা জানান, নদীর পাড়ে প্রাকৃতিক কাজ করতে গিয়ে ফণিভূষণ কুন্ডু এবং নতুন জামাইয়ের জন্য চাল ধুতে গিয়ে রঙ্গনেছা হত্যার শিকার হন। অনেক মুক্তিযোদ্ধা আহত হন, তাদেরকে স্থানীয়রা প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করে।

নিহতদের মধ্যে অনেকেই মাগুরা জেলার হাজিপুর ও শ্রীপুর উপজেলার বাসিন্দা ছিলেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা বিশ্বাস লুৎফর রহমান, যিনি পরবর্তীতে নির্বাচন কমিশনের যুগ্ম-সচিব ছিলেন, তিনি সহযোগীদের সাথে নিহতদের ছয়টি গণকবরে সমাহিত করেন। এই গণকবরস্থলে পরে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়।

কামান্না দিবস ও স্মৃতিসৌধ:

কামান্না দিবস শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এবং এই ভয়াবহ ঘটনাকে স্মরণে রাখতে পালন করা হয়। মুক্তিযোদ্ধারা কামান্নায় একটি মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি যাদুঘর, বিশ্ববিদ্যালয় এবং একটি পর্যটন কেন্দ্র স্থাপন এবং উন্নত মানের সড়ক যোগাযোগের দাবি জানান। ২০২১ সালে, কাজী শাহিনুজ্জামান ওরফে কাজী রাসেল ৫ শতাংশ জমি দান করলেও, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এই জমিতে “মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধ” নির্মাণ করে, যা আগে থেকেই বিদ্যমান ২৭ শহীদ স্মৃতিসৌধের পাশে অবস্থিত। এলাকাবাসী ও মুক্তিযোদ্ধারা দুটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণের কারণ বুঝতে পারছেন না।

বেঁচে যাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের সাক্ষ্য:

এই ঘটনায় বেঁচে থাকা মুক্তিযোদ্ধাদের সাক্ষ্য কামান্নার ঘটনার ভয়াবহতা ও বীরত্বের ইতিহাসকে আরও স্পষ্ট করে তুলে ধরে। তাদের স্মৃতিচারণা থেকে জানা যায়, অনেক মুক্তিযোদ্ধারা নদীতে ঝাঁপ দিয়ে, গাছের আড়ালে লুকিয়ে বা অন্যান্য উপায়ে প্রাণ রক্ষা করেছিলেন।

কামান্নার গুরুত্ব:

কামান্নায় সংঘটিত এই নৃশংস হত্যাকান্ড বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এই ঘটনা মুক্তিযুদ্ধের সময় হানাদার বাহিনীর বর্বরতা ও মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বের প্রতিফলন করে। কামান্নার স্মৃতি সবসময়ই আমাদের মনে রাখতে হবে।

মূল তথ্যাবলী:

  • ১৯৭১ সালের ২৬ নভেম্বর কামান্নায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নৃশংস হামলায় ২৭ মুক্তিযোদ্ধা ও এক গৃহবধূ নিহত হয়।
  • প্রতি বছর ২৬ নভেম্বর কামান্না দিবস পালিত হয়।
  • মুক্তিযোদ্ধারা কামান্নায় একটি মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি যাদুঘর ও পর্যটন কেন্দ্র স্থাপনের দাবি জানান।
  • ২০২১ সালে, কাজী শাহিনুজ্জামান ওরফে কাজী রাসেল ৫ শতাংশ জমি দান করেন।
  • কামান্নার স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণে দুটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণের বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।