বীর বিক্রম গোলাম রসুল: বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের এক অসাধারণ বীর
১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অসামান্য সাহসিকতা ও বীরত্বের জন্য স্মরণীয় হয়ে আছেন শহীদ গোলাম রসুল। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার বিনাউটি ইউনিয়নের চকচন্দ্রপুর গ্রামে জন্মগ্রহণকারী এই বীর মুক্তিযোদ্ধা বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক বীর বিক্রম খেতাবে ভূষিত হন। তার বাবার নাম মফজল ভূঁইয়া এবং মায়ের নাম পরিষ্কারের নেছা। পাঁচ ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। গোলাম রসুল অবিবাহিত ছিলেন।
গোলাম রসুল ইপিআরে কর্মরত ছিলেন। ১৯৭১ সালে তিনি সিলেট সেক্টর হেডকোয়ার্টার্সের ৩ নম্বর উইংয়ের বি কোম্পানিতে কর্মরত ছিলেন, যার কমান্ডার ছিলেন সুবেদার ফজলুল হক চৌধুরী। ২৭ মার্চ, সিলেটের শমশেরনগর বিমানবন্দরে পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে প্রথম আক্রমণে অংশগ্রহণ করেন তিনি। এই আক্রমণে পাকিস্তানি সেনারা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়ে সিলেটে চলে যেতে বাধ্য হয়। পরবর্তীতে পাকিস্তানিদের পাল্টা আক্রমণের মুখে মাধবপুরে প্রতিরক্ষা অবস্থান নেন। এপ্রিলের মাঝামাঝি পাকিস্তানিদের আর্টিলারি ও বিমান হামলার মুখে তারা পশ্চাদপসরণ করে ভারতে চলে যান।
ভারতে পুনর্গঠিত হওয়ার পর ৪ নম্বর সেক্টরের বড়পুঞ্জী সাব-সেক্টর এলাকায় যুদ্ধ করেন গোলাম রসুল। এই এলাকায় গেরিলা যুদ্ধের জন্য উপযুক্ত ভৌগোলিক অবস্থান ছিল। আগস্ট-সেপ্টেম্বর থেকে তারা বিভিন্ন ধরনের অপারেশন চালিয়ে পাকিস্তানিদের পরাজিত করে। অবশেষে ১৪ ডিসেম্বর সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা চিকনাগুলে সরাসরি এক যুদ্ধে শহীদ হন গোলাম রসুল। চিকনাগুলে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একটি শক্ত ঘাঁটি ছিল, যা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ক্যাপ্টেন আবদুর রবের নেতৃত্বে ১৩ ডিসেম্বর রাতে চালানো আক্রমণে অংশ নিয়ে শহীদ হন গোলাম রসুল। তার সাহসিকতা ও বীরত্বের জন্য তিনি সর্বদা বাংলাদেশের জনগণের কাছে স্মরণীয় থাকবেন।