ইউসুফ আলী: স্বাধীনতার সাক্ষী ও বাংলাদেশের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব
১৯২৩ সালে দিনাজপুরে জন্মগ্রহণকারী ইউসুফ আলী বাংলাদেশের ইতিহাসে একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠক হিসেবে তিনি চিরস্মরণীয়। মুজিবনগর সরকারের ত্রাণ ও পুনর্বাসন দপ্তরের প্রধান ছিলেন এবং স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের প্রথম শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার রাজনৈতিক জীবন অত্যন্ত সমৃদ্ধ। পাকিস্তান আমলে ১৯৬৫ সালে তিনি এমএনএ ছিলেন। স্বাধীনতার পর, বঙ্গবন্ধু সরকার, খন্দকার মোশতাক আহমেদ সরকার, জিয়াউর রহমান সরকার এবং এরশাদ সরকার-সহ বিভিন্ন সরকারে শিক্ষা, সমাজ কল্যাণ, বস্ত্র ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এটি দেশের রাজনীতিতে এক অনন্য দৃষ্টান্ত।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ইউসুফ আলীর অবদান অসামান্য। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও পরিচালক হিসেবে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ওপার বাংলায় অগণিত শরণার্থীদের ত্রাণ বিভাগ পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় মুজিবনগর সরকারের স্বাধীনতা ঘোষণাপত্র তিনিই পাঠ করেন এবং মন্ত্রীদের শপথবাক্য পাঠ করান। তিনি অস্থায়ী মুজিবনগর সরকারের যুব লিগ নিয়ন্ত্রণ পরিষদের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। মুক্তিযুদ্ধের পর, তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি (১৯৭২-৭৬) ছিলেন।
শিক্ষামন্ত্রী থাকাকালে নশিপুরে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তি স্থাপন করেন। বস্ত্রমন্ত্রী হিসেবে টেক্সটাইল মিল স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এরশাদের আমলে তাঁর চেষ্টায় পূনর্ভবা নদীর উপর কাঞ্চন সেতু নির্মিত হয়। ব্যক্তি জীবনে তিনি ছিলেন অত্যন্ত বিনয়ী, সাদাসিধে, মিষ্টভাষী ও লোকপ্রিয়। ১৯৯৮ সালে ইউসুফ আলীর মৃত্যু হয়। তিনি বাংলাদেশের রাজনীতি ও শিক্ষা ক্ষেত্রে অমূল্য অবদান রেখে গেছেন।