জাহাঙ্গীর

মুঘল সাম্রাজ্যের চতুর্থ সম্রাট জাহাঙ্গীর (১৫৬৯-১৬২৭): বিশ্বজয়ীর খেতাবধারী এই সম্রাটের জীবন ও রাজত্ব ছিল রহস্য, রোমাঞ্চ, এবং রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রে পরিপূর্ণ। ১৫৬৯ সালের ৩১ আগস্ট ফতেপুর সিক্রিতে জন্মগ্রহণকারী জাহাঙ্গীর (তৎকালীন নাম সেলিম), সম্রাট আকবর ও রাজকুমারী মরিয়ম-উজ-জামানির পুত্র ছিলেন। তার শুরুর জীবন ছিল আকবরের আদর্শের ছায়ায়, কিন্তু পরবর্তীতে তিনি স্বাধীন শাসক হিসেবে নিজের পরিচয় স্থাপন করেন। ১৬০৫ সালে আকবরের মৃত্যুর পর তিনি মুঘল সিংহাসনে আরোহণ করেন।

জাহাঙ্গীরের রাজত্বকাল (১৬০৫-১৬২৭) ছিল রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, এবং সাংস্কৃতিক উত্থানের সময়। তার সাম্রাজ্যের সীমানা বঙ্গ, মেওয়ার, আহমেদনগর, এবং দক্ষিণ ভারত পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। তবে পারস্যের সাফাভি রাজবংশের সাথে কান্দাহার নিয়ে সংঘর্ষ ছিল একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। রাজপুত রাজাদের সাথে সমঝোতা করে তিনি সাম্রাজ্যের স্থায়িত্ব নিশ্চিত করেন।

জাহাঙ্গীর একজন শিল্পপোষক ছিলেন। মুঘল চিত্রকলা তার রাজত্বকালে স্বর্ণযুগে পৌঁছায়। উস্তাদ মনসুরের মতো বিখ্যাত শিল্পীরা তার আশ্রয়ে কাজ করেন। তিনি এক বিশাল পক্ষিশালা এবং পশুশালা পোষণ করতেন এবং ইউরোপীয় ও ফার্সি শিল্পের প্রতি আগ্রহ দেখাতেন। নুরজাহানের প্রভাবের ফলে তার রাজত্বে ফার্সি সংস্কৃতি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে, শালিমার বাগান এর সৃষ্টিও এই সময়কালেই হয়।

ধর্মীয় সহনশীলতার প্রমাণও দেখা যায় তার শাসনামলে। তিনি বিভিন্ন ধর্মের মানুষদের সমান অধিকার দিয়েছিলেন এবং জোরপূর্বক ধর্মান্তর বন্ধ করে দেন। তবে ব্যক্তিগত জীবনে মদ্যপান ও নারী আসক্তি তার নেতিবাচক দিক ছিল। তার পুত্র খসরু ও খুররামের (পরে শাহজাহান) বিদ্রোহ তার রাজত্বের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ছিল। ১৬২৭ সালে কাশ্মীর থেকে ফিরতি পথে তার মৃত্যু হয় এবং তাকে লাহোরের নিকটে সমাহিত করা হয়। জাহাঙ্গীরের জীবন ও রাজত্ব এখনও ইতিহাসবেত্তাদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে।

মূল তথ্যাবলী:

  • জাহাঙ্গীর মুঘল সাম্রাজ্যের চতুর্থ সম্রাট ছিলেন।
  • তিনি ১৬০৫ থেকে ১৬২৭ সাল পর্যন্ত রাজত্ব করেছিলেন।
  • মুঘল চিত্রকলার স্বর্ণযুগ তার রাজত্বকালে দেখা যায়।
  • তিনি ধর্মীয় সহনশীলতার জন্য পরিচিত ছিলেন।
  • তার পুত্রদের বিদ্রোহ তার রাজত্বকে কঠিন করে তুলেছিল।