বাংলাদেশে আলুর উৎপাদন খরচ: বর্ধিত ব্যয় ও বাজারের অস্থিরতা
সম্প্রতি বাংলাদেশে আলুর উৎপাদন খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যার ফলে ভোক্তারা উচ্চ মূল্যের সম্মুখীন হচ্ছেন। বিভিন্ন উৎস থেকে সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী, এক কেজি আলু উৎপাদনে ৩৩ টাকা পর্যন্ত খরচ হচ্ছে, যা গত বছর ছিল মাত্র ২২ টাকা। এই বৃদ্ধির পেছনে কয়েকটি প্রধান কারণ কাজ করছে:
- বীজের দাম বৃদ্ধি: চলতি মৌসুমে উচ্চফলনশীল (উফশী) বা হাইব্রিড জাতের আলুর বীজের দাম দ্বিগুণ বেড়েছে।
- শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি: শ্রমিকদের মজুরিও বেড়েছে, যা আলু চাষের খরচ বাড়িয়ে তুলেছে।
- জমি ভাড়া বৃদ্ধি: জমির ভাড়া বৃদ্ধিও উৎপাদন খরচ বৃদ্ধিতে অবদান রেখেছে।
- হিমাগারের ভাড়া বৃদ্ধি: আলু সংরক্ষণের জন্য হিমাগারের ভাড়াও বেড়েছে, যা ভোক্তা পর্যায়ে দাম বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলে।
- সার ও কীটনাশকের দাম বৃদ্ধি: সার এবং কীটনাশকের দাম বৃদ্ধিও আলু উৎপাদন খরচ বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
রংপুর অঞ্চলের কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আলুর উৎপাদন খরচ প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়েছে। একজন কৃষক, ইসরাফিল হোসেন, উদাহরণ হিসাবে তার ১৫ একর জমিতে আলু চাষের খরচের বিস্তারিত তথ্য প্রদান করেছেন। তার হিসাবে, একর প্রতি ২ লাখ ১১ হাজার ৪০০ টাকা খরচ হচ্ছে, যার মধ্যে হিমাগার সংরক্ষণ ও পরিবহন খরচও অন্তর্ভুক্ত। তারাগঞ্জের এনএন হিমাগারের ব্যবস্থাপক শরিফুল ইসলাম জানান, হিমাগারের ভাড়াও বেড়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) তথ্য অনুসারে, রংপুর অঞ্চলে ১ লাখ ১ হাজার ৫৭৬ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হচ্ছে এবং উৎপাদনের লক্ষ্য ধরা হয়েছে প্রায় ২৭ লাখ টন। কিন্তু উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির কারণে কৃষকদের মধ্যে আলুর ন্যায্যমূল্য পাওয়া নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। অনেকেই আশঙ্কা করছেন যে, নতুন মৌসুমের আলু মাঠপর্যায়ে ২৫ টাকা এবং হিমাগার পর্যায়ে অন্তত ৩৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে না পারলে তারা লোকসান গুনতে হবে।
দেশে আলুর সর্বোচ্চ বার্ষিক চাহিদা ৮০ লাখ টন, কিন্তু ২০২৩-২৪ অর্থবছরে উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ১০ লাখ টনের কাছাকাছি। যদিও উৎপাদন চাহিদার চেয়ে বেশি, তবুও বাজারে মূল্য অস্থিরতা অব্যাহত রয়েছে। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর প্রতি কেজি আলু উৎপাদনে খরচ পড়েছিল ১০ টাকা ৫১ পয়সা, কিন্তু খুচরা বাজারে আলুর দাম ৬০ টাকা পর্যন্ত উঠেছে। এই মূল্য বৃদ্ধির পিছনে মধ্যস্বত্বভোগীদের ভূমিকা, কোল্ড স্টোরেজ মালিকদের সিন্ডিকেট, সরকারি তথ্যের অসঙ্গতি এবং বাজার ব্যবস্থাপনার অভাব ইত্যাদি কারণগুলিকে দায়ী করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাজার ব্যবস্থাপনার উন্নত ব্যবস্থা প্রয়োজন যাতে কৃষকরা ন্যায্য মূল্য পায় এবং ভোক্তারা সাশ্রয়ী মূল্যে আলু পেতে পারে।