বদরগঞ্জ: রংপুরের ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মেলবন্ধন
বাংলাদেশের রংপুর জেলার অন্তর্গত বদরগঞ্জ উপজেলা ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও ভৌগোলিকভাবে সমৃদ্ধ একটি অঞ্চল। প্রায় ৩০১.২৮ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই উপজেলা উত্তরে তারাগঞ্জ, রংপুর সদর ও সৈয়দপুর উপজেলা, দক্ষিণে নবাবগঞ্জ (দিনাজপুর) ও পার্বতীপুর উপজেলা, পূর্বে রংপুর সদর ও মিঠাপুকুর উপজেলা এবং পশ্চিমে পার্বতীপুর উপজেলার সীমানা দ্বারা বেষ্টিত। যমুনেশ্বরী ও চিরনাই নদী এই অঞ্চলের প্রধান জলাশয়।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব:
একাদশ শতাব্দীতে বদরগঞ্জ বরেন্দ্রভূমির অন্তর্গত ছিল। ঐতিহাসিক কৈবর্ত বিদ্রোহ (১০৭১), ইংরেজ বিরোধী ফকির-সন্ন্যাসী ও কৃষক বিদ্রোহ (১৭৬০-১৮১২) এবং নীল বিদ্রোহ (১৮৫৯-১৮৬২) এর মতো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সাক্ষী এই অঞ্চল। তেভাগা আন্দোলনেও বদরগঞ্জের মানুষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। মুক্তিযুদ্ধের সময় (১৯৭১) ২ এপ্রিল থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত বদরগঞ্জ মুক্তাঞ্চল ছিল। পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যায় ঝাড়ুয়ার বিল ও পদ্মপুকুর বধ্যভূমি হিসেবে পরিচিতি পায়।
প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন:
বদরগঞ্জে রয়েছে রাধানগর ইউনিয়নের ৯ গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদ (মুগল আমল), কুতুবপুর ইউনিয়নের কুতুব শাহের মাযার, বখতিয়ারের ডাঙ্গা, মানসিংহপুরের ভীমের গড়, মাদাই খামার, দিলালপুর জমিদার বাড়ি, বারোয়ারী কালীমন্দির, শ্রী শ্রী প্রান্তেশ্বরী কালীমন্দির, গোপীনাথপুর আশ্রম ও মন্দির, জলুবার ভাঙা মন্দির, ঘাটাবিল মন্দির, বুড়ির মন্ডপ, শেকেরহাট শিবমন্দির ইত্যাদি প্রাচীন নিদর্শন।
জনসংখ্যা ও অর্থনীতি:
২০১১ সালের আদমশুমারি অনুসারে বদরগঞ্জের জনসংখ্যা প্রায় ২৮৭৭৪৬ জন, যার মধ্যে পুরুষ ১৪৪২৫৪ জন এবং মহিলা ১৪৩৪৯২ জন। জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি, যদিও শিল্প, ব্যবসা, পরিবহন ও চাকরির উপরও অনেকের নির্ভরতা রয়েছে। ধান, পাট, গম, আলু, সরিষা, তামাক, শাকসবজি এই অঞ্চলের প্রধান কৃষি ফসল।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্য:
বদরগঞ্জে ৭টি কলেজ, ৫৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১৬১টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ৪১টি মাদ্রাসা রয়েছে। শিক্ষার হার ৪৩%। স্বাস্থ্যসেবার জন্য রয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র এবং ক্লিনিক।
সংস্কৃতি ও পর্যটন:
বদরগঞ্জের সংস্কৃতি সমৃদ্ধ। এখানকার প্রাচীন নিদর্শন, ঐতিহাসিক ঘটনা এবং নদী-নালার সৌন্দর্য পর্যটকদের আকর্ষণ করে।
সারসংক্ষেপে বলা যায়, বদরগঞ্জ রংপুরের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা, যার ঐতিহাসিক গুরুত্ব, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং জনসংখ্যাগত গঠন এটিকে অনন্য করে তুলেছে।