ঠাকুরগাঁওয়ের নারগুন: খেজুরের রস ও গুড়ের ঐতিহ্য
বাংলাদেশের রংপুর বিভাগের ঠাকুরগাঁও জেলার ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার অন্তর্গত একটি ইউনিয়ন পরিষদ হল নারগুন। প্রায় ৭১.৬৯ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে অবস্থিত এই ইউনিয়নের ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী জনসংখ্যা ছিল প্রায় ২৩,৫৪৩। ১০ টি গ্রাম ও ৯টি মৌজা নিয়ে গঠিত নারগুন ইউনিয়ন, বিশেষ করে এর খেজুরের রস ও গুড় উৎপাদনের জন্য পরিচিত।
খেজুরের রস ও গুড়:
নারগুনের সুনামের মূলে রয়েছে এখানকার প্রচুর সংখ্যক খেজুর গাছ। শীতের আগমনে, কার্তিক মাস থেকেই শুরু হয় রস সংগ্রহের কাজ। নারগুন গ্রামে ৮০০ এর বেশি খেজুর গাছ রয়েছে বলে জানা যায়। গাছিদের দক্ষতার কারণে প্রতিদিন প্রায় ১০০০ লিটার রস সংগ্রহ করা সম্ভব হয়। এই রস থেকে বিশেষ কায়দায় তৈরি হয় সুস্বাদু গুড় ও পাটালি। বংশ পরম্পরায় গাছিদের এই পেশা জীবিকার মূল উৎস।
অর্থনৈতিক গুরুত্ব:
খেজুরের রস ও গুড়ের ব্যবসা নারগুনের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শীতকালে বাজারে খেজুরের কাঁচা রস ও গুড়ের ব্যাপক চাহিদা থাকে, ফলে গাছিরা উল্লেখযোগ্য আয় করতে পারেন। প্রতিদিন ৫০০-১০০০ টাকা পর্যন্ত আয় হয় এই কাজ থেকে।
ঐতিহ্য ও সংরক্ষণ:
এই ঐতিহ্যবাহী কাজের ধারা অব্যাহত রাখার জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও কৃষি বিভাগ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। গ্রামীণ সড়কের পাশে খেজুর গাছ লাগানো এবং নিরাপদ রস ও গুড় উৎপাদনের জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখার পাশাপাশি একে একটি লাভজনক শিল্পে রুপান্তর করার জন্য সরকারের নানামুখী পদক্ষেপের প্রয়োজন বলে মনে করেন অনেকে।
নারগুনের ভবিষ্যৎ:
নারগুনের খেজুরের রস ও গুড়ের ঐতিহ্যকে আরও সমৃদ্ধ এবং টেকসই করার জন্য সরকারের উদ্যোগের পাশাপাশি, স্থানীয়দের সচেতনতা এবং উদ্যোগের প্রয়োজন। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে খেজুর বাগান করা হলে এটি আরও লাভজনক হতে পারে। এ ছাড়াও, পর্যটনকে কাজে লাগিয়ে এ অঞ্চলের উন্নয়ন সম্ভব। শীতের সকালে কুয়াশার মধ্যে খেজুর গাছের রমনীয় দৃশ্য দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে প্রকৃতিপ্রেমীরা আসেন।