সাদিক কায়েম: একজন নেতার উত্থান ও বিতর্ক
সম্প্রতি বাংলাদেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপটে এক নতুন নামের আবির্ভাব ঘটেছে- সাদিক কায়েম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি হিসেবে নিজেকে প্রকাশ করে তিনি সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলন ও রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছেন। ২০২৪ সালের ২১ সেপ্টেম্বর তিনি ফেসবুক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে প্রকাশ্যে আসেন এবং একইদিন দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সাথে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। তার এই পদক্ষেপের পর থেকেই তাকে ঘিরে নানা আলোচনা ও বিতর্ক শুরু হয়েছে।
পূর্ববর্তী ভূমিকা ও পরিচয়:
সাদিক কায়েম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন। যদিও তিনি আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক সমন্বয়কদের তালিকায় ছিলেন না, তবুও তিনি কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন। অনেক ছবিতে তাঁকে সমন্বয়কদের সাথে দেখা গেছে। তার একজন সহকর্মী প্রবাসী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের খান তাকে 'সালমান' নামে চিনতেন এবং তাদের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল বলে জানান।
রাজনৈতিক দর্শন:
সাদিক কায়েমের ফেসবুক পোস্টে ফ্যাসিবাদ বিরোধীতা, ছাত্র রাজনীতি সংস্কারের তীব্র আহ্বান এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি সমর্থন প্রকাশিত হয়। তিনি চব্বিশের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকে গুরুত্ব দিয়েছেন এবং ছাত্র রাজনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তনের পক্ষে তিনি মতামত দিয়েছেন। তিনি ছাত্র সংসদ ভিত্তিক ছাত্র রাজনীতি প্রতিষ্ঠার পক্ষপাতিত্ব করেন এবং হিংসা, দুর্নীতি ও স্বৈরাচারের তীব্র বিরোধিতা করেন।
বিতর্ক ও সমালোচনা:
সাদিক কায়েমের রাজনৈতিক পরিচয় প্রকাশের পর তার কাজের প্রকৃতি নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। কিছু মহল দাবি করে, তিনি নিজের পরিচয় গোপন করে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছেন এবং প্রতারণা করেছেন। তবে, মানবাধিকারকর্মী ডা. পিনাকী ভট্টাচার্য তার এই পদক্ষেপকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন এবং এটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিরাজনীতিকরণের ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে সাহায্য করবে বলে মনে করেন।
ব্যক্তিগত তথ্য:
সাদিক কায়েম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী। তার বাড়ি খাগড়াছড়ি জেলায়। তিনি খাগড়াছড়ির বায়তুশ শরফ জব্বারিয়া আদর্শ মাদরাসা থেকে দাখিল এবং চট্টগ্রামের বায়তুশ শরফ থেকে আলিম পাস করেছেন। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র সংসদের সাবেক সভাপতি, হিল সোসাইটির সাবেক প্রতিষ্ঠাতা, এবং অন্যান্য কিছু সংগঠনের সাথেও জড়িত ছিলেন।
অন্যান্য তথ্য: বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম সাদিক কায়েমের শিবিরের সাথে সম্পৃক্ততার কথা নিশ্চিত করেছেন এবং দুয়েকদিনের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করার কথা জানিয়েছেন।
উপসংহার:
সাদিক কায়েমের উত্থান এবং তার রাজনৈতিক পরিচয় প্রকাশের পর থেকে ছাত্র রাজনীতি ও আন্দোলনে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। তার ভবিষ্যৎ ভূমিকা ও কাজের উপর অনেকের নজর রয়েছে।