বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন আন্দোলন বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। উল্লেখযোগ্য কিছু আন্দোলনের কথা বলা যায়:

  • *চৈতন্যদেবের বৈষ্ণব আন্দোলন (১৪৮৬-১৫৩৩):** এই আন্দোলন জাতিভেদ, ধর্মীয় ও সামাজিক কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল। নদীয়া এ আন্দোলনের প্রধান কেন্দ্র ছিল। চৈতন্যদেবের নেতৃত্বে বৈষ্ণবধর্ম একটি সামাজিক আন্দোলনে পরিণত হয়। তিনি জাতিভেদ, ধর্মভেদ ও বর্ণভেদকে নাকচ করে কৃষ্ণভক্তদের সমান অধিকার প্রদানের পক্ষে প্রচার করেন। কীর্তন, নামসঙ্কীর্তন ও নগরকীর্তনের মাধ্যমে এই আন্দোলন প্রাণবন্ত হয়।
  • *কৃষক আন্দোলন (১৮৭০-১৯৪৭):** পূর্ববঙ্গের কৃষকদের ওপর জমিদার, মহাজন ও ভদ্রলোকের শোষণের বিরুদ্ধে লড়াই। মুসলিম কৃষকদের একটি বিরাট অংশ হিন্দু শোষকদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে অংশ নেয়। ফকির-সন্ন্যাসী আন্দোলন, তিতুমীরের আন্দোলন, ওহাবী ও ফরায়েজী আন্দোলন এই আন্দোলনের উল্লেখযোগ্য দিক।
  • *ভাষা আন্দোলন (১৯৪৭-১৯৫৬):** বাংলা ভাষার রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতির দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্র করে ছাত্র-বুদ্ধিজীবীদের আন্দোলন। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি আন্দোলন রক্তক্ষয়ী হয়। এ আন্দোলন রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে পরিচালিত হয়।
  • *টঙ্ক আন্দোলন (১৯৪৬-১৯৫০):** উত্তর ময়মনসিংহে কৃষকদের ধানে পরিশোধ্য খাজনার বিরুদ্ধে আন্দোলন। মণি সিংহের নেতৃত্বে আন্দোলন চলে।
  • *তেভাগা আন্দোলন (১৯৪৬-৪৭):** ফসলের দুই-তৃতীয়াংশ দাবি নিয়ে বর্গাচাষীদের আন্দোলন। বাংলার কৃষকদের প্রধানত উত্তরাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছিল।

এই আন্দোলনগুলো ছাড়াও, অন্যান্য বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন, যেমন নিম্নবর্ণ আন্দোলন, শ্রমিক আন্দোলন, স্বদেশী আন্দোলন, অসহযোগ আন্দোলন, খিলাফত আন্দোলন, এবং ব্রতচারী আন্দোলন ইত্যাদি বিভিন্ন রূপে বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। প্রতিটি আন্দোলনই তাদের নিজস্ব কারণ, লক্ষ্য, নেতৃত্ব ও কৌশল নিয়ে পরিচালিত হয়েছে, কিন্তু সকলের মূল লক্ষ্য ছিল সামাজিক ন্যায়বিচার ও বৈষম্য নিরসন।

মূল তথ্যাবলী:

  • চৈতন্যদেবের বৈষ্ণব আন্দোলন জাতিভেদ প্রথার বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল।
  • কৃষক আন্দোলন জমিদার-মহাজনদের শোষণের বিরুদ্ধে ছিল।
  • ভাষা আন্দোলন বাংলা ভাষার মর্যাদার জন্য সংগ্রাম করেছিল।
  • তেভাগা আন্দোলন বর্গাচাষীদের অধিকার আদায়ের লড়াই ছিল।