সংবিধান প্রণয়ন কমিটি

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের পর স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন সংবিধান প্রণয়নের কাজ শুরু হয়। ১৯৭২ সালের ৪ঠা নভেম্বর গণপরিষদে গৃহীত এবং ১৬ ডিসেম্বর কার্যকর হওয়া এই সংবিধান প্রণয়নের জন্য গঠিত হয় একটি ৩৪ সদস্যের কমিটি। এই কমিটিকে সাধারণত "সংবিধান প্রণয়ন কমিটি" নামে অভিহিত করা হয়।

  • *কমিটির গঠন ও সদস্যবৃন্দ:** ১৯৭২ সালের ১১ই এপ্রিল গণপরিষদের অধিবেশনের দ্বিতীয় দিনে আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে এই ৩৪ সদস্যের কমিটি গঠিত হয়। কমিটিতে একমাত্র নারী সদস্য ছিলেন বেগম রাজিয়া বানু এবং একমাত্র বিরোধী দলীয় সদস্য ছিলেন ন্যাপের (মোজাফফর) সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। কমিটির অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সদস্যদের মধ্যে ছিলেন তাজউদ্দিন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, খন্দকার মোশতাক আহমেদ, এ এইচ এম কামারুজ্জামান, এম আবদুর রহিম, শামসুদ্দিন মোল্লা, শেখ আবদুর রহমান, এম আমীর-উল ইসলাম প্রমুখ।
  • *কমিটির কার্যক্রম:** ১৭ই এপ্রিল থেকে ৩রা অক্টোবর পর্যন্ত কমিটি বিভিন্ন পর্যায়ে বৈঠক করে এবং জনগণের মতামত সংগ্রহের জন্য আহ্বান জানায়। সংগৃহীত মতামত থেকে ৯৮টি সুপারিশ গ্রহণ করা হয়। কমিটি বিভিন্ন দেশের সংবিধান পর্যালোচনা করে এবং জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটিয়ে সংবিধানের একটি পূর্ণাঙ্গ খসড়া প্রস্তুত করে। খসড়া সংবিধান বিল ১২ই অক্টোবর গণপরিষদের দ্বিতীয় অধিবেশনে পেশ করা হয়। ৪ঠা নভেম্বর এটি গৃহীত হয় এবং ১৬ই ডিসেম্বর কার্যকর হয়।
  • *গুরুত্বপূর্ণ দিক:** সংবিধান প্রণয়ন কমিটি বাংলাদেশের সংবিধানের ইতিহাসে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কমিটির প্রস্তাবিত সংবিধান জনগণের স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গৃহীত হয় এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের গঠনকাঠামো নির্ধারণ করে। তবে পরবর্তী সময়ে সংবিধান বারবার সংশোধনের মধ্য দিয়ে গেছে, যা কমিটির উদ্দেশ্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
  • *সমালোচনা:** সংবিধান প্রণয়ন কমিটির কাজ এবং তৈরি করা সংবিধান নিয়ে নানা সমালোচনা রয়েছে। কমিটির গঠনপ্রক্রিয়া, জনমত গ্রহণের পদ্ধতি এবং সংবিধানের কিছু ধারা নিয়ে বিতর্ক ছিল। বিশেষ করে ৭০ নম্বর অনুচ্ছেদ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছিল, যা সংসদ সদস্যদের স্বাধীনতা খর্ব করার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছিল।

মূল তথ্যাবলী:

  • ১৯৭২ সালের ১১ এপ্রিল ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ৩৪ সদস্যের সংবিধান প্রণয়ন কমিটি গঠিত হয়।
  • কমিটি জনগণের মতামত সংগ্রহ করে সংবিধানের খসড়া প্রস্তুত করে।
  • ১২ অক্টোবর খসড়া সংবিধান বিল গণপরিষদে পেশ করা হয়।
  • ৪ নভেম্বর সংবিধান গৃহীত হয় এবং ১৬ ডিসেম্বর কার্যকর হয়।
  • কমিটির কাজ ও তৈরি করা সংবিধান নিয়ে বিভিন্ন সমালোচনা রয়েছে।

গণমাধ্যমে - সংবিধান প্রণয়ন কমিটি

বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নে ভূমিকা পালন করেছে।