ধর্মনিরপেক্ষতা: একটি ব্যাখ্যা
ধর্মনিরপেক্ষতা বা সেকুলারিজম একটি বহুমুখী ধারণা। সাধারণভাবে বলা যায়, এটি রাষ্ট্র ও ধর্মের মধ্যে পৃথকীকরণকে নির্দেশ করে। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে, রাষ্ট্রের আইন ও নীতি কোনো নির্দিষ্ট ধর্মের উপর নির্ভরশীল নয়; বরং সকল নাগরিকের জন্য সমান অধিকার ও সুযোগ নিশ্চিত করা হয়। এখানে রাষ্ট্র কোনো ধর্মকেই সমর্থন বা বিরোধিতা করে না, এবং ধর্মীয় বিশ্বাসের ভিত্তিতে কাউকে কোনো অধিকার অস্বীকার করা হয় না। ধর্মনিরপেক্ষতায় রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভিত্তি হলো যুক্তি, তথ্য ও প্রমাণ, ধর্মীয় বিশ্বাস নয়।
ধর্মনিরপেক্ষতার ধারণাটি ১৮৫১ সালে ব্রিটিশ লেখক জর্জ জ্যাকব ভোল্ট (১৮১৭-১৯০৪) প্রথম ব্যবহার করেন। তিনি ধর্মনিরপেক্ষতাকে সমাজে শৃঙ্খলা আনয়নের একটি মাধ্যম হিসেবে দেখেছিলেন। পরবর্তীতে, বেরি কসমিন-এর মতো গবেষকরা ধর্মনিরপেক্ষতাকে 'কঠোর' ও 'নমনীয়' দুইভাগে ভাগ করেছেন।
জর্জ জ্যাকব ১৮৯৬ সালে তার একটি প্রকাশনায় ধর্মনিরপেক্ষতাকে এইভাবে সংজ্ঞায়িত করেছিলেন: ‘ধর্মনিরপেক্ষতার জীবন, বিশুদ্ধরূপে মানুষের বিবেচনার উপর প্রতিষ্ঠিত, যারা ধর্মের অনির্দিষ্ট বা অপর্যাপ্ত, অবিশ্বস্থ বা অবিশ্বাস্য ধর্মতত্ত্বকে বিশ্লেষণ করেতে ইচ্ছুক তাদের জন্যই এই মতবাদের উৎপত্তি।’ তিনি উন্নয়ন, বিজ্ঞান ও সার্বিক কল্যাণকে ধর্মনিরপেক্ষতার তিনটি মূল ভিত্তি হিসেবে চিহ্নিত করেন।
তুরস্কে, ‘আতাতুর্ক চিন্তা এসোসিয়েশন’ (ADD) একটি বিখ্যাত ধর্মনিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান। ২০০৭ সালে তাদের আয়োজিত সমাবেশে প্রায় বিশ লক্ষ মানুষ আতাতুর্কের ধর্মনিরপেক্ষ নীতির সমর্থন জানিয়েছিলেন। ১৮৫১ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘লেইসেস্টার ধর্মনিরপেক্ষ সমাজ’ সবচেয়ে পুরনো ধর্মনিরপেক্ষ সমাজ বলে মনে করা হয়।
ধর্মনিরপেক্ষতা একটি জটিল ধারণা যার বাস্তবায়ন ও ব্যাখ্যা বিভিন্ন সমাজে ভিন্ন হতে পারে। তবে এর মূল লক্ষ্য হলো রাষ্ট্র ও সমাজে ধর্মীয় ভেদাভেদ দূর করে সকল নাগরিকের জন্য সমতা ও সুবিচার নিশ্চিত করা।