বাংলাদেশে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা একটি দ্রুত বর্ধনশীল পরিবহন ব্যবস্থা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। কম খরচে দ্রুত যাতায়াতের সুবিধা থাকার কারণে এটি জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে, কিন্তু একই সাথে এটি নিয়ে বিতর্কও চলছে।
উত্থান ও জনপ্রিয়তা: ২০০৩-০৪ সালের দিকে চীন থেকে আমদানি শুরুর পর ২০১০ সাল থেকে বাংলাদেশেই অটোরিকশা তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়। কম দাম এবং বিদ্যুৎ চালিত হওয়ার কারণে এটি অর্থনৈতিক দিক থেকে বেশ লাভজনক। ৪০ লাখেরও বেশি রিকশা সারা দেশে চলে, ঢাকা শহরেই ৭-৮ লাখ।
সমস্যা ও বিতর্ক: ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার প্রধান সমস্যা হচ্ছে এর অনিয়ন্ত্রিত গতি এবং নিরাপত্তা। কাঠামোগত দুর্বলতা, ব্রেকিং সিস্টেমের অপর্যাপ্ততা এবং ভারসাম্যহীনতা দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ায়। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এআরই) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে ৯০০টি দুর্ঘটনা ঘটেছে, যার ৫৮২টি মারাত্মক ছিল। অটোরিকশা নিয়ে আইনি অনিয়ম, চাঁদাবাজি, অবৈধ ব্যাটারি চার্জিং ও ট্রাফিক নিয়ম উপেক্ষা আরও সমস্যা তৈরি করে। হাইকোর্টে প্যাডেলচালিত রিকশা মালিকদের করা রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নিয়ে আইনি জটিলতা দেখা দেয়।
সরকারি প্রতিক্রিয়া ও সম্ভাব্য সমাধান: সরকার বিভিন্ন সময়ে অটোরিকশা নিষিদ্ধ করার ঘোষণা দিলেও তা কার্যকর করতে পারেনি। হাইকোর্টের নির্দেশের পর বিক্ষোভের মুখে সরকার পুনরায় চলাচলের অনুমতি দেয়, তবে নির্দিষ্ট রাস্তায়। সমস্যার সমাধানে উন্নতমানের প্রযুক্তি, পরিবেশবান্ধব ব্যাটারি, লাইসেন্সিং প্রক্রিয়া, ট্রাফিক নিয়মের কঠোর প্রয়োগ এবং বৈধ চার্জিং স্টেশন প্রয়োজন। অটোরিকশা চালকদের পুনঃপ্রশিক্ষণ, আর্থসামাজিক সুরক্ষা এবং টেকসই ব্যবস্থাপনাও গুরুত্বপূর্ণ। চীন ও ভারতের মতো দেশে কার্যকর নীতিমালা গ্রহণের উদাহরণ অনুসরণ করা যেতে পারে।