ঢাকা মহানগরীর উত্তর-পূর্বাংশে অবস্থিত বাড্ডা থানা ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমৃদ্ধ একটি এলাকা। ১৯৯৮ সালের ৯ই ডিসেম্বর গুলশান ও ক্যান্টনমেন্ট থানার কিছু অংশ নিয়ে বাড্ডা থানা গঠিত হয়। ৩৬.৮৪ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই থানার উত্তরে খিলক্ষেত, দক্ষিণে খিলগাঁও, পূর্বে রূপগঞ্জ এবং পশ্চিমে গুলশান, ক্যান্টনমেন্ট ও রামপুরা থানা অবস্থিত। ২০০১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, বাড্ডার জনসংখ্যা ছিল ৩২০,০২৫; যার মধ্যে পুরুষ ১৭৬,৮১০ এবং মহিলা ১৪৩,২১৫। ধর্মীয় জনসংখ্যার হিসেব অনুযায়ী, ৩০৫,১১৮ জন মুসলিম, ১১,৬৩৩ জন হিন্দু, ২,৮৯৪ জন বৌদ্ধ, ৩২৯ জন খ্রিস্টান এবং ৫১ জন অন্যান্য ধর্মের অনুসারী। বালু নদী বাড্ডার একটি উল্লেখযোগ্য জলাশয়।
বাড্ডার ইতিহাসে মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ১৯৭১ সালে পাকবাহিনীর নির্যাতন, লুটপাট এবং হত্যাকাণ্ডের শিকার হয় এই এলাকা। বেরাইদ ব্রিজের কাছে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে পাকবাহিনীর সংঘর্ষের ঘটনাও ইতিহাসে স্মরণীয়। বাড্ডায় অবস্থিত প্রাচীন বৌদ্ধ মঠ ও আজাদ মসজিদ ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে বিদ্যমান।
শিক্ষার দিক থেকে বাড্ডা অত্যন্ত সমৃদ্ধ। নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি, পাইওনিয়ার ডেন্টাল মেডিকেল কলেজ, ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখানে অবস্থিত। শিক্ষার হার ৫৮.৩৬%, যার মধ্যে পুরুষ ৬৩.৪২% এবং মহিলা ৫২.১৮%।
অর্থনীতিতে বাড্ডার অবদান উল্লেখযোগ্য। পোশাক শিল্প, করাতকল, মিষ্টির কারখানা, ফার্নিচার তৈরির কারখানাসহ বিভিন্ন শিল্প ও কলকারখানা এখানে অবস্থিত। তৈরি পোশাক, মিষ্টি, ফার্নিচার, হস্তশিল্প বাড্ডার প্রধান রপ্তানিদ্রব্য। যমুনা ফিউচার পার্ক, বসুন্ধরা আবাসিক প্রকল্প, ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা এখানে অবস্থিত।
বাড্ডার ৪৫টি মসজিদ, ১১টি মন্দির, ৫টি গির্জা এবং ১টি প্যাগোডা রয়েছে। বায়তুল কাদের জামে মসজিদ, দক্ষিণ বাড্ডা জামে মসজিদ, মেরুল বাড্ডা জামে মসজিদ, শ্রী শ্রী মহাদেব আশ্রম ও কালী মন্দির, শ্রী শ্রী রাধা গোবিন্দ মন্দির, কাঁঠালদিয়া দুর্গা মন্দির উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান।
সার্বিকভাবে, ঐতিহাসিক গুরুত্ব, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিল্প-কারখানা এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে বাড্ডা ঢাকা মহানগরীর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।