বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি): জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তার অগ্রদূত
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) বাংলাদেশের জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তার এক অপরিহার্য অংশ। ১৯৭৬ সালের ১৩ নভেম্বর রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ (নং-৮৮) বলে প্রতিষ্ঠিত এই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটি দেশে অপরিশোধিত ও পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি, বিতরণ এবং বিপণনের দায়িত্ব পালন করে। বিপিসি দেশের একমাত্র তেল শোধনাগার, ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড (ইআরএল)-এর মাধ্যমে বিভিন্ন গ্রেডের পরিশোধিত পেট্রোলিয়াম পণ্য উৎপাদন করে। এছাড়াও, বিপিসি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে সরাসরি জি-টু-জি চুক্তি ও আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে অপরিশোধিত তেল (যেমন আরবিয়ান লাইট ক্রুড অয়েল, মারবান ক্রুড অয়েল) আমদানি করে।
বিপিসির অধীনে অনেকগুলো উপক্রম চালু থাকে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো তিনটি তেল বিতরণ ও বিপণন কোম্পানি (পদ্মা, যমুনা, মেঘনা), দুটি লুব্রিকেন্ট ব্লেন্ডিং প্লান্ট, একটি এলপিজি বোতলজাতকরণ ও বিতরণ প্লান্ট, এবং একটি বিটুমিন উৎপাদন কোম্পানি। মোট কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ৩,৫৭৪ (বিপিসি ১৬৬, অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ৩৪০৮)। এই সংস্থাটি জাতীয় অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে এবং দেশের জ্বালানি সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ২০১৭ সালের অর্থনৈতিক সমীক্ষায় বিপিসিকে সবচেয়ে লাভজনক রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
বিপিসি তাদের জ্বালানি তেল মজুত ও বিতরণ ব্যবস্থা উন্নত করার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। চট্টগ্রাম-ঢাকা তেল পাইপলাইন প্রকল্পের মাধ্যমে জ্বালানি তেল পরিবহনে কার্যকারিতা বৃদ্ধি এবং নৌপথে নির্ভরতার হ্রাস বিপিসির একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। গভীর সমুদ্র থেকে সরাসরি তেল খালাসের জন্য মহেশখালীতে একটি ১২০ কিলোমিটার পাইপলাইন স্থাপন করা হয়েছে।
তবে, আন্তর্জাতিক বাজারের দাম এবং দেশের অর্থনৈতিক স্থিতি বিপিসির কার্যক্রমকে প্রভাবিত করে। বৈদেশিক মুদ্রার সংকটের সময় বিপিসি বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কাছে দেনা পরিশোধ করতে কষ্ট পেয়েছে। এই সমস্যা দূর করার জন্য বিভিন্ন কৌশল প্রয়োগ করা হয়েছে, যেমন বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে এলসি খোলা। সাম্প্রতিক সময়ে বিপিসি তাদের বকেয়া দেনা পরিশোধ করে একটি উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে।
সামনে চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগ সত্ত্বেও, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন দেশের জ্বালানি ক্ষেত্রের এক গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হিসেবে নিজের ভূমিকা পালন করতে চেষ্টা করে যাচ্ছে। স্বচ্ছতা, দক্ষতা এবং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বিপিসি ভবিষ্যতে আরও উন্নত এবং সফল হতে পারবে।