ফতুল্লা: নারায়ণগঞ্জের শিল্প ও ঐতিহাসিক নগরী
ফতুল্লা, নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার অন্তর্গত একটি ঐতিহাসিক ও শিল্পাঞ্চল। পূর্বে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন, পশ্চিমে বুড়িগঙ্গা ও ধলেশ্বরী নদী, উত্তরে রাজধানী ঢাকা এবং দক্ষিণে মুন্সীগঞ্জ জেলা অবস্থিত। কথিত আছে, শাহ ফতেহ উল্লাহ নামক একজন দরবেশের নামানুসারে এলাকার নামকরণ হয় ফতেহুল্লা, যার অপভ্রংশ ফতুল্লা।
- *ঐতিহাসিক গুরুত্ব:** ফতুল্লা দিল্লি সালতানাতের সোনারগাঁও প্রদেশের রাজধানী সোনারগাঁওয়ের নিকট অবস্থিত ছিল। ১৬১০ সালে সুবাদার ইসলাম খান চিশতি বারো ভুইয়াদের পরাজিত করে ঢাকাকে সুবে বাংলার রাজধানী ঘোষণা করেন এবং ফতুল্লার হাজীগঞ্জ এলাকায় হাজীগঞ্জ দুর্গ (খিজিরপুর দুর্গ) নির্মাণ করেন। ১৮৪২ সালে বিক্রমপুর মহকুমা স্থাপনের পর ফতুল্লা অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৮৮২ সালে নারায়ণগঞ্জকে আলাদা মহকুমা করা হয়। ১৯৩০ সালে ফতুল্লা ও কুতুবপুর ইউনিয়ন নিয়ে ফতুল্লা ইউনিয়ন বোর্ড গঠিত হয়, পরে ১৯৬২ সালে দুটি ইউনিয়নে বিভক্ত হয়। ১৯৪৩ সালে কাশীপুর ইউনিয়ন স্থাপিত হয়। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ফতুল্লায় অনেক শহীদ হন।
- *ভৌগোলিক অবস্থান ও জনসংখ্যা:** ফতুল্লা থানার আয়তন প্রায় ৬৫ বর্গ কিলোমিটার এবং জনসংখ্যা ৭৪২,৯৭৬ (প্রায়)। জনঘনত্ব প্রায় ১১,৪৩০। ২০০১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী সাক্ষরতার হার ৬০% এর বেশি।
- *অর্থনীতি:** ফতুল্লা শিল্পের জন্য বিখ্যাত। এখানে প্রায় ৭০০ টি ছোট-বড় কারখানা রয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ফতুল্লা বিসিক শিল্প নগরী (এনায়েতনগর)। বেলজিয়ামের রাণী মাথিল্ডে ২০২৩ সালে বাংলাদেশ সফরকালে ফতুল্লার একটি পোশাক কারখানা পরিদর্শন করেন।
- *পর্যটন:** ফতুল্লার কুতুবপুরে অবস্থিত বাংলাদেশের ৩য় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম, খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়াম, ধারণ ক্ষমতা প্রায় ২৫,০০০। বুড়িগঙ্গা নদীতে অবস্থিত ‘মেরি আন্ডারসন ভাসমান রেস্টুরেন্ট ও বার’ পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু।
- *শিক্ষা:** ফতুল্লায় কয়েকশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, একাধিক কলেজ এবং প্রস্তাবিত নারায়ণগঞ্জ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের কথা রয়েছে।