পুলিশের ভঙ্গুর অবস্থা

আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩:৫৪ পিএম

একাত্তরের পর থেকে বাংলাদেশে পুলিশ বাহিনীর ভূমিকা ও অবস্থা বহুবিধ রূপ ধারণ করেছে। স্বৈরাচারী শাসনামলে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে পুলিশ ব্যবহৃত হলেও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সময় জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে। শেখ হাসিনা সরকারের ১৫ বছরের শাসনামলে (২০০৯-২০২৪) পুলিশ বাহিনীতে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার নতুন সদস্য যোগ হলেও, পেশাদারিত্বের অভাব ও রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে বাহিনীটির কার্যক্ষমতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। ২০০৯-১০ অর্থবছরে ৩ হাজার ৩৩১ কোটি টাকার বরাদ্দ বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১৭ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেলেও, অবকাঠামো উন্নয়ন অপরিকল্পিত ও দুর্নীতিগ্রস্ত ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।

পুলিশের জনবল বৃদ্ধি, বাজেট বৃদ্ধি সত্ত্বেও, জনগণের প্রতি সেবামূলক মনোভাব গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনতে পুলিশের বড় অংশ দলীয় কর্মীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। নির্বাচনে দলীয় নেতা-কর্মীদের পরিবর্তে পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি অত্যধিক নির্ভরশীলতা বৃদ্ধি পেয়েছিল।

পুলিশের বদলি, পদোন্নতি, নিয়োগ, কার্যক্রম পরিচালনা ও কর্মপরিবেশ সুষ্ঠু করার জন্য ব্যাপক সংস্কারের দাবি উঠেছে। পুলিশকে সেবামুখী করতে এবং জবাবদিহি নিশ্চিত করতে শক্ত কাঠামো গঠনেরও আহ্বান জানানো হয়েছে। ইংল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশের মতো স্বাধীন পুলিশ কমিশন ও পুলিশ অভিযোগ কমিশন গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

পুলিশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি, ‘ভালো পদায়ন’ নিয়ে প্রতিযোগিতা ও অবৈধ অর্থ লেনদেন পুলিশের পেশাদারিত্বের বিকাশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। পদায়নে সুষ্ঠুতা আনতে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়নের জন্য দাবি উঠেছে। থানাগুলোকে জনমুখী করতে এবং পুলিশের হয়রানি বন্ধ করার জন্য ঢেলে সাজানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

পুলিশের কনস্টেবল নিয়োগ, পদোন্নতি, প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তনের প্রয়োজন। মামলার তদন্তে যোগ্য এসআই প্রস্তুত করার জন্য প্রশিক্ষণে গুরুত্ব দেওয়ার দাবি উঠেছে। সাইবার অপরাধ, উগ্রবাদ মোকাবিলায় বিশেষায়িত ইউনিট গঠন ও প্রশিক্ষণে গুরুত্ব দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।

পুলিশ সদস্যদের অপরাধের পেছনে ঘুষ ও অবৈধ লেনদেনের প্রাধান্য স্পষ্ট। জবাবদিহি নিশ্চিত করার জন্য শক্ত কাঠামো গঠনের আহ্বান জানানো হয়েছে। পুলিশ অভিযোগ কমিশন গঠন, সম্পদের হিসাব বিবরণী জমা দেওয়া এবং অসংগতি থাকলে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পুলিশের ভঙ্গুর অবস্থা আরও স্পষ্ট হয়েছে। এ সময়ে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজি বৃদ্ধি পেয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরের শাসনামলে বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনা বেড়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর পুলিশের মনোবল বৃদ্ধি, জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনা এবং পেশাদারিত্ব ফিরে পাওয়ার জন্য সংস্কার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তবে দীর্ঘদিনের দলীয়করণের ফলে তৈরি হওয়া ভঙ্গুর অবস্থা থেকে উত্তরণের কাজ বেশ কঠিন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

মূল তথ্যাবলী:

  • শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পুলিশ বাহিনীর ভঙ্গুর অবস্থা স্পষ্ট হয়েছে।
  • রাজনৈতিক প্রভাব ও দুর্নীতি পুলিশের কার্যক্ষমতায় প্রভাব ফেলেছে।
  • পুলিশ সংস্কারের জন্য স্বাধীন কমিশন গঠনের দাবি উঠেছে।
  • থানাগুলোতে জনগণের সেবা নিশ্চিত করার জন্য সংস্কারের প্রয়োজন।
  • পুলিশ সদস্যদের প্রশিক্ষণ ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার দাবি উঠেছে।

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।

গণমাধ্যমে - পুলিশের ভঙ্গুর অবস্থা

৫ আগস্ট ২০২৪

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পুলিশ বাহিনীতে ভঙ্গুর অবস্থা দেখা দেয়।